হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব (রঃ) এর উদব

 


হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব (রঃ) এর বয়স যখন চৌরাশি বছরে পৌঁছে, তখন তাঁর একটি চক্ষু নষ্ট হয়ে যায় এবং অপর চক্ষু থেকেও পানি ঝরতে থাকে । তখনও তিনি বলতেন : আমি নারীদের চেয়ে অধিক অন্য কিছুকে ভয় করি না। 

আবদুল্লাহ ইবনে আবী ওদায়া বলেন : আমি তাঁর কাছে গিয়ে বসতাম। কয়েক দিন যাইনি। এরপর একদিন গেলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ কয়দিন কোথায় ছিলে? আমি বললাম : আমার স্ত্রী মারা গিয়েছিল। তাই হাযির হতে পারিনি। তিনি বললেন : তুমি আমাকে খবর দিলে না কেন? এরপর আমি প্রস্থানোদ্যত হলে তিনি বললেন : খুব তো চলে যাচ্ছ; কিন্তু জিজ্ঞেস করি, পরে বিয়ে শাদী করলে কি না? আমি আরজ করলাম : হুযুর, আমি গরীব মানুষ। আমাকে কে কন্যা দান করবে। তিনি বললেন : আমি দিচ্ছি। আমি সবিস্ময়ে বললাম : আপনি ! তিনি বললেন : হাঁ। অতঃপর খোতবা পাঠ করে সামান্য মোহরানার বিনিময়ে আপন কন্যার বিবাহ আমার সাথে সম্পন্ন করে দিলেন। আমি আহ্লাদে আটখানা হয়ে সেখান থেকে চলে এলাম এবং কারও কাছ থেকে কিছু কর্জ নেয়ার কথা ভাবছিলাম। ইতিমধ্যে মাগরিবের সময় হয়ে গেল। আমি নামায পড়ে গৃহে ফিরে এলাম। বাতি জ্বালিয়ে রুটি ও তেল নিয়ে ইফতার করতে বসলাম। এমন সময় দরজা থেকে করাঘাতের শব্দ কানে ভেসে এল। আমি জিজ্ঞেস করলাম : কে? জওয়াব এল : সায়ীদ। আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম, কোন্ সায়ীদ হতে পারে! সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব হবেন, তা কল্পনায়ও ছিল না। কারণ, তিনি চল্লিশ বছর ধরে মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া সম্পূর্ণ মওকুফ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দরজা খুলেই দেখি, সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব দণ্ডায়মান। আমি ধারণা করলাম, বোধ হয় কোন সাংঘাতিক প্রয়োজনে আমার কাছে এসেছেন । আমি আরজ করলাম : আমাকে ডেকে নিলেন না কেন? তিনি বললেন : তোমার কাছে আসাই সমীচীন মনে হল। আমি বললাম : আদেশ করুন। তিনি বললেন : তুমি বিবাহ করেছ। এখন একাকী শয়ন করবে- এটা আমার কাছে ভাল মনে হয়নি। তাই তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছে পৌঁছে দিতে এসেছি। আমি ভাল করে দেখতেই দেখি, বাস্তবে সেই ভাগ্যবতী কন্যা সলজ্জ ভঙ্গিতে তাঁর পেছনেই দণ্ডায়মান রয়েছে। তিনি তার হাত ধরে ভিতরে ঠেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেলেন । এদিকে কন্যাটি লজ্জা শরমের আতিশয্যে মাটিতে পড়ে গেল। আমি দরজা খুব ভাল করে বন্ধ করে দিলাম। অতঃপর যে পেয়ালায় রুটি ও তেল রাখা ছিল, তা বাতির কাছ থেকে সরিয়ে দিলাম, যাতে স্ত্রীর দৃষ্টিগোচর না হয়। এরপর গৃহের ছাদে উঠে প্রতিবেশীদেরকে ডাক দিলাম। সকলেই একত্রিত হয়ে জিজ্ঞেস করল : ব্যাপার কি? আমি বললাম : সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব আজ দিনের বেলায় তাঁর কন্যার বিবাহ আমার সাথে সম্পন্ন করেছেন। এখন রাতের বেলায় অপ্রত্যাশিতভাবে তিনি তাঁর কন্যাকে এখানে রেখে গেছেন। লোকেরা সবিস্ময়ে জিজ্ঞেস করল : সায়ীদ তোমাকে বিবাহ করিয়েছেন? আমি বললাম : হাঁ। তারা বলল : তাঁর কন্যা এখন তোমার গৃহে? আমি বললাম : হাঁ। অতঃপর তারা সকলেই তার কাছে গেল। আমার মা সংবাদ পেয়ে এলেন এবং বললেন : তিন দিন পর্যন্ত তুই বউ মাকে স্পর্শ করতে পারবি না। যদি করিস কখনও তোর মুখ দেখব না। এই তিন দিনে আমরা তাকে ঠিক করে নেব। মায়ের আদেশমত আমি তিন দিন আলাদা রইলাম। এরপর যখন তাকে দেখলাম, তখন পরমাসুন্দরী, কালামুল্লাহর হাফেয, সুন্নতের আলেম এবং স্বামীর হক সম্পর্কে বেশ ওয়াকিফহাল পেলাম। একমাস পর্যন্ত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব আমার গৃহে এলেন না এবং আমিও তাঁর কাছে গেলাম না। একমাস পর যখন গেলাম, তখন তিনি ভক্তদের বৃত্তের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলেন। আমি সালাম করলে তিনি শুধু জওয়াব দিলেন এবং কিছু বললেন না। ভক্তদের প্রস্থানের পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন : তোমার স্ত্রীর অবস্থা কি? আমি বললাম : খুব ভাল। তিনি বললেন : মর্জির খেলাফ কোন কিছু পেলে লাঠি দিয়ে খবর নেবে। আমি গৃহে চলে এলাম। এরপর তিনি বিশ হাজার দেরহাম আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এ ছিল সেই কন্যা, যাকে খলীফা আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান তার খেলাফত কালে আপন পুত্রবধূরূপে গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব অস্বীকৃত হন। এরপর খলীফা মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে একশ' বেত্রদণ্ডে দণ্ডিত করেন এবং কনকনে শীতের মধ্যে এক কলসী ঠাণ্ডা পানি তাঁর গায়ে ঢেলে দেন। এছাড়া কম্বলের কোর্তাও পরিধান করান। এসব কারণে কন্যাকে রাতেই স্বামী গৃহে বিদায় দেয়া পূর্ণ ধার্মিকতা ও সাবধানতার পরিচায়ক ছিল। (আল্লাহ তাঁকে উত্তম প্রতিদান দিন।)

#এহইয়া_উলুমিদ্দিন

#ইসলাম_ই_মুক্তির_দিশা

__