পীরের পরিচয় (মাজালিসে গাযযালী- ৮)



📚মাজালিসে গাযযালী ✍🏻ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)

৮/ অষ্টম মজলিস

পীরের পরিচয়

একাদশ রবিউল আউয়াল, বৃহস্পতিবার। দরবার শরীফে প্রকৃত পীরের গুণাবলী সম্বন্ধে আলাপ-আলোচনা হইতেছিল- এই যুগে প্রকৃত পীর কে এবং কোথায় তাহার সন্ধান করিব?


হযরত মাখদুম জাঁহা বলিলেন, যিনি তিনটি পথ অতিক্রান্ত করিয়াছেন এবং উহার আরোহণ ও অবরোহণের অবস্থা সম্বন্ধে জ্ঞাত, তিনিই পীর। তিনটি পথ হইল, শরীয়ত, তরীকত এবং হাকীকতের পথ। 

যেব্যক্তি এই তিনটি পথের সাথে পরিচিত নহে এবং অতিক্রম করে নাই, সে পীর নহে; বরং শয়তান। তোমরা অনেককেই দেখ জায়নামাযে বসিয়া পীর হওয়ার দাবী করে। তাহারা কখনও পীর মুরশিদ নহে। বরং তাহারা এই পথের প্রতিমা এবং পৈতাস্বরূপ। তাহাদের অবস্থা তো নিম্নরূপ যে, সুন্দর মুখাকৃতি জ্ঞান হরণকারী। মর্যাদার অনুসন্ধানকারী এবং ধর্ম বিক্রেতা। সকলেই স্ব স্ব কাজের জ্ঞানে সামেরী সমতুল্য। প্রকাশ্যে মূসা দৃশ্যমান হইলেও ভিতরে ভিতরে বিষধর সাপ। তাহাদের অন্তর বাগানের দিকে, পৃথিবীর সম্পদের দিকে। তাহাদের জ্ঞান, শরীয়ত এবং ধর্ম আছে কি? তাহারা একে অন্যের রক্ত পিপাসু।


লোকে এক বুযুর্গকে জিজ্ঞাসা করিল, প্রতিমা কি? তিনি উত্তর করিলেন, যে বস্তু তোমাকে আল্লাহ হইতে ফিরাইয়া রাখে উহাই প্রতিমা এবং পৈতা। সাবধান! কখনও এই জাতীয় পীরের ধোঁকায় পড়িবে না এবং তাহাদের নিকট যাইবে না। ইহারা ধর্ম পথের ডাকাত। কোন বুযুর্গ বলিয়াছেন: কিছু অনভিজ্ঞ লোক দরবেশী পোশাক পরিধান করিয়া রহিয়াছে। মুখে তাহাদের ধর্মের বাণী, অন্তরে কুফরী। তাহারা সততা পবিত্রতার পথে এক পদও অগ্রসর হয় নাই। ইহারা নেক লোকদের বদনামকারী।

ইহার পর যোহদ বা বৈরাগ্য সম্বন্ধে এরশাদ করিলেন, যাহারা হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণী- 

("যাহারা পৃথিবী হইতে উদাসীন, পরকালের প্রতি আসক্ত; আল্লাহর ফয়সালা এবং নির্ধারিত ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট, তাহারাই যাহেদ বা সংসার বিরাগী") মোতাবেক আমল করে, তাহারাই যাহেদ।

ওহে ভ্রাত! পীর ও সংসারবিরাগী হওয়া বড়ই কঠিন কাজ। আত্মদর্শী এবং নফসের পূজারী এই সম্পদের অধিকারী হইতে পারে না। আবার আল্লাহ ইচ্ছা করিলে যাহাকে খুশী তাহাকেই দিতে পারেন। তাঁহার কাজের বিরোধিতা করার ক্ষমতা কাহারও নাই। তিনি যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার একমাত্র অধিকারী। যাহা ইচ্ছা তাহাই করেন। তিনি পরম শক্তিশালী, তাই তাঁহার কাজ তাঁহার ইচ্ছা মোতাবেকই হইয়া থাকে।


হে ভ্রাত! আমার কথা শোন! তথাকথিত এই দরবেশদের প্রতি কখনও দৃষ্টিপাত করিবে না, এই দোকানদারদের প্রতি কখনও ফিরিয়া চাহিবে না। কারণ, ইহারা পথপ্রদর্শক নহে; বরং ভ্রান্ত পথের নেতা।


তারপর বলিলেন, সকল বস্তুর মূল ঈমান। তারপর পীর হওয়া এবং সংসার- বিরাগী হওয়া। ঈমান পূর্ণতা লাভ করুক ইহা যেন কেহই চাহে না। ঈমানের পূর্ণতা কেহ কামনা করিলে অবশ্যই তাহার সেই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয় এবং তাহার আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়। কিন্তু সকলেই চায় পীর হইতে, সংসারবিরাগী এবং আবেদ হইতে'। আর এই সমস্ত বিষয়বস্তু আসল উদ্দেশ্য সাধনের পথে প্রধান অন্তরায়। অর্থাৎ আসল উদ্দেশ্য লাভ হইতে বঞ্চিত হওয়ার উপকরণ। এতদসত্ত্বেও তাহাদের দৃঢ় বিশ্বাস, তাহারা উদ্দেশ্য সাধনে কৃতকার্য হইয়াছে। মানিয়া লইলাম যে, তাহারা সব কিছুই পাইয়াছে। কিন্তু ঈমান পূর্ণতা লাভ না করা পর্যন্ত মারেফাতের দৃষ্টিতে তাহারা মুসলমানই নহে।


তুমি সূফী হইয়াছ। সবুজ পোশাক পরিধান করিয়া চিল্লায় বসিয়াছ। সবই হইল, কিন্তু মুসলমান হও নাই।

আল্লাহর নিকট লজ্জিত হওয়া মোমেন বান্দার কর্তব্য। কারণ, লজ্জা ঈমানেরই একটি অংশ; বরং লজ্জা ঈামানের আত্মা। মাথা যেমন দেহের অবিচ্ছেদ্য অংশ, লজ্জাও তেমনি ঈমানের অপরিহার্য অংশ। লজ্জাহীন ব্যক্তি বেঈমান।


হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করিয়াছেন, "লজ্জা ঈমানের অংশ। যাহার লজ্জা নাই তাহার ঈমানও নাই।" ফলহীন বৃক্ষের যেমন কোন মূল্য নাই, তেমনি লজ্জাহীন ঈমানেরও কোন অস্তিত্ব নাই।

----------------

No comments:

__