লায়লাতুল রাগায়েব (মাজালিসে গাযযালী -৬)



📚মাজালিসে গাযযালী ✍🏻ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
(6 )ষষ্ঠ মজলিস

লায়লাতুল রাগায়েব–
দরবার শরীফ হইতে এক বন্ধু দাঁড়াইয়া বলিলেন, আগামীকাল জমাদিউল আখের মাসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার, দিনে রোযা রাখিয়া রাতে লায়লাতুর রাগায়েব নামায আদায় করিব কিনা?
পীর ও মুরশিদ বলিলেন, কিতাবে লিখিত আছে, রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার রোযা রাখিয়া দিনগত রাতে অর্থাৎ রজবের প্রথম শুক্রবারের রাতে লায়লাতুর রাগায়েব নামায পড়িবে। আজ রজব মাসের প্রথম শুক্রবারের রাত নহে। 
লায়লাতুর রাগায়েব নামায রজব মাসের প্রথম শুক্রবার রাতে পড়িতে হয়। কিন্তু নামায পড়া উচিত এবং আগামী বৃহস্পতিবার রোযা রাখিবে। সতর্কতা অবলম্বনস্বরূপ আগামী শুক্রবারের রাতেও জামাআতের সাথে লায়লাতুর রাগায়েবের নামায আদায় করিবে।
মাওলানা যাহেদ জিজ্ঞাসা করিলেন, সমস্ত মাস ও দিন আল্লাহর সৃষ্টি। তবে কেন একের উপর অন্যকে মর্যাদা দান করা হইয়াছে ?
হযরত পীর সাহেব বলিলেন, এ কথা ঠিক যে, সমস্ত মাস ও দিন আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু প্রতিটি বস্তুর জন্য মর্যাদা নির্ধারণ করা হইয়াছে যেন তাঁহার বান্দাগণ অধিক পুণ্য অর্জনের মাধ্যমরূপে সেইগুলি ব্যবহার করিতে পারে। তেমনি মানুষের মধ্যে মর্যাদার তারতম্য নির্ণয় করা হইয়াছে। কাহাকেও পয়গম্বর, কাহাকেও ওলী আবার কাহাকেও আলেম করিয়াছেন। অতঃপর পয়গম্বরদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য রহিয়াছে । কেহ নবী আবার কেহ বা নবী ও রাসূল।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন-
"এই সমস্ত রাসূলের মধ্যে আমি একের উপর অন্যকে মর্যাদা দান করিয়াছি তাহাদের মধ্যে কেহ আল্লাহর সাথে কথোপকথন করিয়াছেন। আল্লাহ তাহাদের মধ্যে কাহারও কাহারও মর্যাদা উন্নত করিয়াছেন।”
কোন পয়গম্বরই আমাদের হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম)-উনার সমকক্ষ নহেন। আমাদের হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) যে স্থানে গিয়াছিলেন সে স্থান সম্বন্ধে কোন নবী বা কোন ফেরেশতা ই অবগত ছিলেন না। হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) স্বয়ং এই মর্যাদা সম্বন্ধে এরশাদ করিয়াছেন :
“আল্লাহর সাথে আমার এমন একটি সময় নির্ধারিত রহিয়াছে যখন কোন ফেরেশতা এবং নবী-রাসূলের স্থান হয় না।”
তেমনি ওলীদেরকেও বিভিন্ন প্রকার মর্যাদা দান করা হইয়াছে। তাঁহাদের মধ্যে কেহ পথপ্রদর্শক, কেহ আশেক আবার কেহ বা পূর্ণ নিরাপদ।
তদ্রূপ মাটিকেও বিভিন্ন প্রকার মর্যাদার অধিকারী করা হইয়াছে। এক মাটিকে কাবা অন্য মাটিকে গির্জা করিয়াছেন। কোন মাটিই কাবার মাটির সমকক্ষ হইতে পারে না। অন্যান্য যাবতীয় কিছুকে ইহার উপরই ধারণা করিয়া লইবে ।
আল্লাহ তাআলা সমস্ত সৃষ্টিকেই এইভাবে ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদা দান করিয়াছেন। মর্যাদার স্তরবিন্যাস না করা হইলে সমস্ত কিছুই এক সমান হইয়া পড়িত। ইহা হেকমত বিরোধী। এই শ্রেণীবিন্যাস দ্বারাই আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্যের উৎকর্ষ সাধন করা হইয়াছে। 
তুমি কি লক্ষ্য করিয়া দেখ নাই, পৃথিবীর রাজা-বাদশাহরা লোকজনের পদমর্যাদা অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ করিয়া থাকেন? একজনকে মন্ত্রী আবার অন্য জনকে প্রহরী নিযুক্ত করেন। একজনকে সভাসদ করেন, অন্য জনকে নিকটেও ঘেঁষিতে দেন না। একজনের ধন-সম্পদ কাড়িয়া লইয়া তাহাকে বন্দী করেন আবার আর একজনকে উপাধি ও জায়গীর দিয়া সম্মানিত করেন।
পৃথিবীর বাদশাহই যখন তাহার প্রজাদের মধ্যে এমন শ্রেণীবিভাগ করিতে পারেন, তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষে তাঁহার একাধিপত্য ও সৃষ্টির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য এমন শ্রেণীবিন্যাস করা তো আরও উপযোগী। এই একচ্ছত্র অধিপতি যে আঠার হাজার মাখলুক সৃষ্টি করিয়াছেন তাহার প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদা বহিয়াছে। তাহাতে যদি সামান্য পরিমাণেও কম থাকে তবে তাঁহার রাজত্বে খুঁত থাকিয়া যাইবে এবং সৌন্দর্যের হানি হইবে । তিনি জ্ঞানী ও হাকীম। সুতরাং তাঁহার প্রতিটি কাজ সুশৃঙ্খল । তাহাতে কোন প্রকার খুঁত নাই।
যেমন- কোন শহরে যদি তাঁতী না থাকে তবে ঐ শহরের সৌন্দর্যে ঘাটতি দেখা দিবে। কারণ, কাপড়ের অভাবে লোক উলঙ্গ থাকিবে এবং শীত-তাপ হইতে আত্মরক্ষায় অপারগ হইয়া পড়িবে।
বাদশাহর পক্ষে যেমন দানশীল হওয়া দরকার তেমনি কৃপণতা করাও দরকার । রূঢ় ব্যবহার করার সাথে সাথে তাহাকে দয়াপরবশও হইতে হইবে। কারণ, রাষ্ট্র টিকাইয়া রাখারা জন্য একজন বাদশাহর মধ্যে এই সমস্ত গুণ থাকা একান্ত প্রয়োজন । এই প্রসঙ্গে তিনি একটি কাহিনী বলিলেন যে, —
শামসুদ্দীন কাদীম নামে এক বাদশাহ ছিলেন। তাহার প্রধানমন্ত্রীর নাম ছিল আরসালান। একদিন বাদশাহ মন্ত্রীকে ডাকিয়া বলিলেন, তোমাকে আমার একটি বিষয় জিজ্ঞাস্য আছে, যদি সঠিক উত্তর দাও তবে জিজ্ঞাসা করি ।
মন্ত্রী বলিলেন, বলুন! আমি সঠিক উত্তরই দিব। বাদশাহ বলিলেন, আমার দুই পুত্র। প্রথম পুত্র হাতেম একটি প্রদেশের শাসনকর্তা। দ্বিতীয় পুত্র আযম অন্য দেশের শাসনকর্তা । এখন বল, দুই ভাইয়ের মধ্যে বাদশাহী করার উপযুক্ত কে ?
মন্ত্রী বলিলেন, আপনি সঠিক উত্তর দিতে বলিয়াছেন, আমি তাহাই দিব । দুই ভাইয়ের একজনও রাষ্ট্র পরিচালনা করার উপযুক্ত নহে ।
বাদশাহ মন্ত্রীর কথা শুনিয়া মনঃক্ষুণ্ণ হইলেন । তথাপি জিজ্ঞাসা করিলেন, কেন উপযুক্ত নহে ?
মন্ত্রী বলিলেন, হাতেম সহনশীল এবং দয়ালু। আযম দাম্ভিক, অত্যাচারী এবং খামখেয়ালী স্বভাবের।
দুই ভাই দুই প্রকার চরিত্রের অধিকারী। অথচ রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য উভয়বিধ গুণের সমাবেশ থাকিতে হইবে। উভয়ের মধ্যেই খুঁত রহিয়াছে। সুতরাং কেহই বাদশাহ হওয়ার উপযুক্ত নহে।
অতঃপর পীর ও মুরশিদ বলিলেন, মন্ত্রী যাহা বলিয়াছিলেন পরিশেষে তাহাই সঠিক প্রমাণিত হইল । কিছুদিন পর বাদশাহ শামসুদ্দীন কাদীম মারা যান। হাতেম ও আযম তাহাদের স্ব স্ব এলাকার বাদশাহ হইলেন। হাতেম তাহার দয়াপরবশতার জন্য রাজ্য ধ্বংস করিয়া দিলেন। অপরপক্ষে আযমের অত্যাচার-উৎপীড়নের দরুন তাহাকে সিংহাসনচ্যুত করা হইল। ইহা দ্বারা প্রমাণিত হইল যে, রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য উভয়বিধ গুণের প্রয়োজন । অন্যথায় শাসনক্ষমতা হইতে সরিয়া দাঁড়াইতে হয় ।
 তারপর মাওলানা যাহেদ জিজ্ঞাসা করিলেন, যদি এই আঠার হাজার আলমের মধ্যে কোন একটি আলম ধ্বংস হইয়া যায়, তবে তাঁহার খোদায়ীর মধ্যে কোন প্রকার তারতম্য দেখা দিবে কিনা ?
পীর ও মুরশিদ উত্তর দিলেন, সমস্ত সৃষ্টিও যদি ধ্বংস হইয়া যায় তথাপি তাঁহার সত্তা ও গুণাবলীর মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য পরিলক্ষিত হইবে না। আর যদি আঠার হাজারের পরিবর্তে লক্ষাধিক মাখলুকও সৃষ্টি করেন তবুও তাঁহার পক্ষে কোন বাড়াবাড়ি হইবে না। আবার ধ্বংস করিয়া দিলেও তাঁহার সত্তা ও গুণাবলী যথাবিহিত স্থায়ী থাকিবে। কারণ, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সৃষ্টির জন্য, আল্লাহর জন্য নহে । তিনি অনাদি অনন্ত । কিন্তু সৃষ্টি ধ্বংস হইয়া গেলে রাষ্ট্রের বিধি-ব্যবস্থা বানচাল হইয়া পড়ে ।
তারপর বলিলেন, আল্লাহ তাআলা কখনও তাঁহার প্রেমিকদের উপর রহমতের ঝর্ণাধারা বর্ষণ করেন আবার কখনও বা ক্রোধের লু হাওয়া প্রবাহিত করেন। কিন্তু তাঁহারা জানেন, ভাল-মন্দ সবই আল্লাহর পক্ষ হইতে । তাই তাঁহারা সুখ-দুঃখ সব কিছুই মধুর ন্যায় আকণ্ঠ পান করেন । যদি তাঁহারা ইহাকে বস্তুবাদীদের ন্যায় অন্যের প্রতি প্রযুক্ত করেন, তবে এই বিপদ গ্রাসে তাঁহারা কোন স্বাদ আনন্দ পান না ।
অতঃপর মাওলানা যাহেদ জিজ্ঞাসা করিলেন, এক সত্যের সন্ধানী উদ্দেশ্য সাধনে ব্রতী। সে তাহা কিভাবে অর্জন করিবে ? কারণ, তিনি অনিত্য, ইহা নিত্য, তিনি স্রষ্টা আর ইহা সৃষ্টি । তিনি প্রাচুর্যের মালিক আর ইহা দরিদ্র ! পীর ও মুরশিদ বলিলেন, ইহা সত্য। কিন্তু ইহাও তাঁহার তরফ হইতে । উদাহরণস্বরূপ বলা যাইতে পারে যে, কুকুর কখনও বাদশাহর দরবারে গিয়া বসিতে পারে না। কিন্তু বাদশাহ যদি কুকুরকে দরবারে যাওয়ার এবং সম্মুখে বসার অনুমতি দেন, তবে তাহা কুকুরের ইচ্ছায় নহে ; বরং বাদশাহর ইচ্ছায় সম্পন্ন হইয়া থাকে ।
অতঃপর এক বন্ধু জিজ্ঞাসা করিলেন, মানুষ যখন নিদ্রিত হয়, তখন রূহ দেহ হইতে বাহির হইয়া যায় কিনা?
এরশাদ করিলেন, রূহ দুইভাবে বাহির হয়। প্রথম প্রকার সম্পূর্ণভাবে, দ্বিতীয় প্রকার আংশিক। সম্পূর্ণরূপে বাহির হইয়া গেলে আর ফিরিয়া আসে না, অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করে। আংশিক যেমন- কোন লোকের নিদ্রিত হওয়া। যখন জাগ্রত করে জাগিয়া যায়। কিন্তু নিদ্রিত অবস্থায় সে নিশ্চুপ থাকে। তাহার সম্মুখে কোন কথাবার্তা বলিলেও সে শুনিতে পায় না। এই জন্যই নিদ্রাকে আংশিক মৃত্যু বলে। হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করিয়াছেন, নিদ্রা মৃত্যুর ভাই।
অন্য এক বন্ধু জিজ্ঞাসা করিলেন, রূহের প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) অবগত ছিলেন কিনা ?
এরশাদ করিলেন, হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) যদিও প্রকৃত অবস্থা অবগত ছিলেন তথাপি তাঁহার প্রতি নির্দেশ ছিল, আপনি বলিয়া দিন, "রূহ আল্লাহর এক নির্দেশ।" হয়ত হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইচ্ছা ছিল রূহ সম্বন্ধে কিছু বলিবেন। কিন্তু আল্লাহর পক্ষ হইতে দ্বিতীয় নির্দেশ আসিল, “সামান্য জ্ঞান ব্যতীত আপনাকে আর কিছুই দেওয়া হয় নাই।”
বুযুর্গগণ বলেন, আল্লাহর কোন কোন বান্দা রূহের প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে জ্ঞাত। হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) যদি রূহের প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে জ্ঞাত ছিলেন তবে তাহাতে বিস্ময়ের কি আছে? হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) দোআ করিতেন, হে আল্লাহ ! সমস্ত বস্তুর প্রকৃত অবস্থা আমাকে জ্ঞাত করুন। তাঁহার দোআ আল্লাহর নিকট কবুল হইত। তাই রূহের প্রকৃত অবস্থা তিনি জ্ঞাত ছিলেন। কিন্তু বর্ণনা করার আদেশ ছিল না।
কোন কোন বুযুর্গ রূহকে দেহ বলিয়াছেন। কিন্তু তাহা এত সূক্ষ্ম যে, দৃষ্টিগোচর হয় না। আরও বলেন, ফেরেশতাগণও দেহবিশিষ্ট। কিন্তু এত দ্রুত গতিসম্পন্ন যে, পলকের মধ্যে আসমান হইতে যমীনে এবং যমীন হইতে আসমানে উঠানামা করিতে পারেন। ফেরেশতাদের চলাফেরার প্রয়োজন আছে, রূহের নাই। তাই রূহের কাঠামো ফেরেশতাদের চেয়েও সূক্ষ্ম।

এক বন্ধু বলিলেন, আমি একটি কবিতা দেখিয়াছি যাহার অর্থ নিম্নরূপ : 
সুন্দর মুখের অধিকারী সর্বক্ষণ ইসলামকে ধ্বংস করে। আমি যখনই কোন সুন্দর মুখের অধিকারী মুসলমানকে দেখিয়াছি তখনই কাফের হইয়া গিয়াছি। ইহার অর্থ কি ?
এরশাদ করিলেন, এমন সব কথার প্রতি মনঃসংযোগ করিতে নাই। কারণ, পাগলের কথায় জ্ঞানবানদের পক্ষে আমল করা ঠিক নহে। কারণ, খোদা প্রেমিক পাগলগণ এক বিশেষ অবস্থা এবং সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলেন। কিন্তু জ্ঞানবানদের পক্ষে তাহা বলা অন্যায়। আল্লাহ পাগলের ঐ কথাকেই কবুল করিয়া থাকেন।
হযরত মূসা (আঃ)-এর যুগ। দেশে বৃষ্টি নাই, ফসল নাই। মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়িয়া হা-হুতাশ করিতেছে। সকলে ময়দানে আসিয়া বৃষ্টির জন্য নামায পড়িল, দোয়া করিল। কিন্তু বৃষ্টি হইল না। অবশেষে তাহারা হযরত মূসা (আঃ)-এর নিকট আসিয়া বলিল, আপনি আল্লাহর নবী, যুগের শ্রেষ্ঠ বুযুর্গ। আপনি বৃষ্টির জন্য আল্লাহর নিকট দোআ করুন।
হযরত মূসা (আঃ) হাত উঠাইয়া আল্লাহর দরবারে দোআ করিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
“মূসা যখন তাহার দেশবাসীর জন্য বৃষ্টি কামনা করিল । আল্লাহ তাআলা প্রত্যাদেশ দিলেন, শহরে চলিয়া যাও এবং বারাখ নামক এক পাগলের সন্ধান কর । সে যদি বৃষ্টির জন্য দোআ করে তবেই বৃষ্টি হইবে।
আল্লাহর নির্দেশমত হযরত মূসা (আঃ) শহরে গেলেন এবং বারাখের সন্ধান করিতে লাগিলেন। অনেক সন্ধান করার পর তাঁহার সাক্ষাত পাইলেন ।
হযরত মূসা (আঃ) বলিলেন, বৃষ্টির জন্য আপনি আল্লাহর নিকট দোআ করুন। বারাখ বলিলেন, আপনি আল্লাহর নবী। আপনি থাকিতে আমি এরূপ ধৃষ্টতা করিতে পারি না।
হযরত মূসা (আঃ) বলিলেন, আল্লাহ নির্দেশ দিয়াছেন, বারাখ দোআ করিলে দৃষ্টি দিব।
বারাখ উঠিয়া দাঁড়াইলেন এবং আকাশের দিকে মুখ করিয়া বলিলেন, কাহার নিকট তুমি এই কৃপণতা শিখিলে?
এই কথা তাঁহার মুখ হইতে বাহির হইতে না হইতেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়িতে আরম্ভ করিল। পরদিন হযরত মূসা (আঃ) বারাখের নিকট গেলেন। বারাখ বলিলেন, আপনি লক্ষ্য করিয়াছেন কি, আমি গতকাল আল্লাহকে কি বলিয়াছি?

অবশ্য পাগলের পাগলামি করা অন্যায় কিছু নহে। তাহার সকল ঔদ্ধত্যই বৈধ। এখানে ভাল-মন্দ সব কিছু বিলুপ্ত হইয়া যায়। তাহার সকল কথাই গ্রহণযোগ্য।
এই প্রসঙ্গে তিনি আর একটি কাহিনী বর্ণনা করিলেন যে, রোম শহরে এক দরবেশ ছিলেন। তাঁহার নাম আবদুল্লাহ ইসহাক। তাঁহার মুরীদ ও ভক্তের দল ছিল অগণিত। এক রাতে তিনি কিছু বিরক্তির ভাব লইয়া খানকা হইতে বাহির হইয়া এক মন্দিরে প্রবেশ করিলেন এবং নিজের গলায় পৈতা পরিধান করিলেন। মুরীদ ও ভক্তের দল পীর সাহেবের এই অন্যায় কাজ দেখিয়া প্রায় সকলে তাঁহাকে ছাড়িয়া চলিয়া গেল। হাতেগনা কয়েকজন লোকমাত্র তাঁহার সাথে রহিল কয়েকদিন পর তাঁহার এক ভক্ত স্বপ্নে দেখিলেন, হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) শহর প্রাচীরের নিকট আগমন করত অতিশয় ক্ষিপ্রতার সাথে শহরে প্রবেশ করিতেছেন।

এই ভক্ত অতি বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এত ক্ষিপ্রতার সহিত কোথায় তাশরীফ লইয়া যাইতেছেন? এরশাদ করিলেন, আবদুল্লাহ ইসহাক আল্লাহর প্রতি খুবই ক্রোধান্বিত হইয়াছে। আমি সন্ধি করানোর জন্য যাইতেছি।
মুরীদ জাগ্রত হইয়া আনন্দের সাথে তখনই মন্দিরের দিকে দৌড় দিলেন। গিয়া দেখেন পীর সাহেব গলার পৈতা দূরে নিক্ষেপ করত সেজদায় পড়িয়া বলিতেছেন : আমি তওবা করিতেছি, তওবা করিতেছি। হে খোদা! সন্ধি করিয়া লও, মেহেরবানী কর, ক্ষমা কর।
-----------------------

No comments:

__