ইসলামের আলোকে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা



গত শতাব্দীতে আমেরিকায় শিকাগো শহরে অধিকার আদায়ের একটি মিছিলে গুলি করে হত্য করা হয় কয়েকজন নিরীহ শ্রমিককে । পরবর্তীতে এই ঘঠনাকে কেন্দ্র করে দিনটিকে শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করা হয়। বর্তমানে বিশ্ব যখন একটি ছোট্ট গ্রামে (গ্লোবাল ভিলেজ) পরিণত হয়েছে। একটির সঙ্গে আরেকটির সীমান্ত লাগানো। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের স্বার্থ জড়িত। তখন শ্রম দিবস পালিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। ইংরেজি বর্ষের পঞ্চম মাস মে'র প্রথম দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক অ্রমিক দিবশ হিসাবে। এমতাবস্থায় আমাদের কর্তব্য আন্তর্জাতিক সন্মান, শ্রমিক ও মানবাধিকার প্রভৃতি দিবশ উপলক্ষে ইসলামের শ্রমিকের অধিকার কিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে তা সবার সামনে উপস্থাপন করা। কারণ ইসলামই সেই ধর্ম প্রথম যে মানবাধিকারের বিধান প্রবর্তন করেছে। যেমন ইসলামই শ্রম ইতিহাসে সর্বপ্রথম শ্রমিকের প্রতি যথার্থ দৃষ্টি দিয়েছে। তাকে দিয়েছে সন্মান ও মর্যাদা আর শ্রমের স্বীকৃতি। পক্ষান্তরে কোন কোন সনাতন ধর্মে শ্রমের অর্থ ছিল দাসত্ব বশ্যতা । আবার কোন ধর্মে এর অর্থ ছিল লাঞ্চনা ও অবমাননা ।ইসলাম সমাজে আর দশজন সদস্যের মত নাগরিক হিসাবে তাদের প্রকৃতিক অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দিয়েছে। তেমনি শ্রমিক হিসাবে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে অনেক মূলনীতি ও বিধিও প্রবর্তন করেছে। যাতে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়। তাসের ইহ ও পরকালীন জীবনে তাদের ও তাদের পরিবারের সন্মানিত জীবন লাভ হয়। এভাবে ইসলাম শ্রমগ্রহীতার প্রতি আহবান জানিয়েছে শ্রমিকের সঙ্গে মানবিক ও সন্মান জনক আচরণ করতে। তার প্রতি মমতা দেখাতে । তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাকে বারণ করেছে তার সাধ্যাতীত কাজের নির্দেশ প্রদান থেকে। এমনকি নানা অধিকার সুযোগ নিশ্চিত করেছে ইসলাম শ্রমিকের জন্য। শ্রমগ্রহীতার কাধে যা সব বাধ্যবাদকতা আরোপ করা হয়েছে তার মধ্যে সবচে গুরুত্বপূর্ভ হল শ্রমের মুল্য বা মজুরী । সেহেতু ইসলাম এর প্রতি অত্যদিক গুরুত্ব আরোপ করেছে।আমরা দেখেছি ইসলাম কিভাবে কাজ বা শ্রমকে ইবাদত হিসাবে গন্য করে। কীভাবে একে সকল ইবাদতের ওপর স্থান দেয়।আর শ্রমের এই পবিত্র দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে ইসলাম শ্রমিকের মজুরী বা পারিশ্রমিককেও পবিত্র ঘোষনা করে।উদ্বুদ্ধ করে যাতে সকল শ্রমিককে তার শ্রমের মুল্য পরিশোধ করা হয়। পবিত্র কুরআনে অনেক যায়গায় 'আযর' বা বিনিময় শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। আবার অসংখ্য হাদিসেও শ্রমের বিনিময়ের প্রতি বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শ্রমিকের অধিকার আদায়ে রসুল সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর ঘোষণা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, শ্রমিকের গায়ের গাম শুকিয়ে যাওয়ার আগে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও 
(ইবনে মাজাহ)
রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই আল্লাহ তায়ালা যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তা- খেতে দাও, যা তুমি নিজে খাও, তাকে তা- পরিধান করতে দাও, যা তুমি নিজে পরিধান কর।” (বুখারী)
কিয়ামতের দিন শ্রমিকের পক্ষে মহান আল্লাহ দাঁড়াবেন 
'হযরত আবু হুরাইরা রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সা বলেছেন যে, মহান আল্লাহ ফরমান জারি করেছেন যে কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেব
. যে ব্যক্তি আমার নামে শপথ করে, প্রতিশ্রুতি দেয় অতঃপর ওয়াদা ভঙ্গ করে 
. যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন লোক কে বিক্রি করে মূল্য খেয়ে ফেলল (তাকে কৃতদাস বাণিয়ে দিল) এবং 
. যে ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ করে কাজ আদায় করে নিল কিন্তু শ্রমের পারিশ্রমিক প্রদান করল না 
(বুখারী-মুসলিম)
ইসলামের ইতিহাস পড়লে আমরা দেখি শ্রমের দাতা ও গ্রহিতার মধ্যে বৈষম্য ইসলামে ছিলনা এবং নেই যেমন নিচের কিছু ঘঠনা পড়ে অনুমান করতে পারেন। নবী-রাসূলগণ শ্রমিকদের কত মর্যাদা দিয়েছেন ইসলামের সব নবী ছাগল চরিয়ে নিজে শ্রমিক হয়ে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন
হযরত আবু হুরাইরা (রঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী (সঃ)  থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সঃ) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা যথ নবী পাঠিয়েছেন সকলে ছাগল চরায়েছেন সাহাবীগণ বললেন হে আল্লাহর রাসূল আপনিও কি চরায়েছেন ? তখন রাসূল সা বললেন হ্যাঁ! আমি কয়েক কেরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরায়েছি (শ্রম খেটেছি) 
তাহলে বুঝা যায় মুসলিম কোন প্রকারেই শ্রমিককে হেয় করতে পারেনা।
মালিক হযরত শোয়াইব (আঃ) তাঁর মেয়ের বিয়ে দিয়ে শ্রমিক নবী মূসাকে (আঃ) জামাই বানিয়েছেন
রসুল (সঃ) শ্রমিক যায়েদ (রাঃ)-এর কাছে আপন ফুফাতো বোন জয়নবের বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি (সঃ) যায়েদকে (রাঃ) মুতারের যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন
ইসলামের প্রথম মোয়াজ্জিন বানানো হয়েছিল শ্রমিক হযরত বিলালকে (রাঃ)
মক্কা বিজয় করে কাবা ঘরে প্রথম প্রবেশের সময় মহানবী (সা.) শ্রমিক বেলাল (রাঃ) শ্রমিক খাব্বাবকে (রাঃ ) সাথে রেখে ছিলেন নবীজী কখনো নিজ খাদেম আনাসকে (রাঃ) ধমক দেননি এবং কখনো কোনো প্রকার কটুবাক্য কৈফিয়ত তলব করেননি
আরো অসংখ্য হাদিসে আমরা দেখতে পাই শ্রমিকের মর্যাদা কত উর্ধে । তাই পহেলা মে তথাকথিত শ্রমিক দিবস পালন নয় । ইসলাম ও শ্রমিকের অধিকার পর্যালোচনার দিবস বলেই আখ্যেয়িত করা যুক্তিযুক্ত।

শবে বরাতের আমল

পবিত্র শবে বরাতের আমল

#পবিত্র_শবে_বরাতের_আমল
শবে বরাত হচ্ছে মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের রাত। অর্থাৎ বরাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে ও পরবর্তী দিনে রোযা রেখে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের সন্তুষ্টি অর্জন করাই মূল উদ্দেশ্য। শবে বরাতে কোন্ কোন্ ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি (চৌদ্দ তারিখ দিনগত) উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে - “হযরত আবু মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আল্লাহর হাবীব হুযূর পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষণা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলূকাতকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। (ইবনে মাজাহ, আহমদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হলো, রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং দিনে রোযা রাখতে হবে। যার মাধ্যমে আল্লাহ পাক বান্দাহকে ক্ষমা করে স্বীয় সন্তুষ্টি দান করবেন।
বরাতের রাত্রিতে যেসব ইবাদত করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-
বরাতের নামায: শবে বরাতে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে।
ছলাতুত তাসবীহ নামায: অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ-এর নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়। (নিচে লিংক দেয়া হল)
তাহাজ্জুদ নামায:
অতঃপর তাহাজ্জুদের নামায পড়বে, যা দ্বারা আল্লাহ পাক-উনার নৈকট্য হাছিল হয়।
(নিচে লিংক দেয়া হল)
কুরআন শরীফ তিলাওয়াত: কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা-উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।
মীলাদ শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ: মীলাদ শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন হুযূর পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
যিকির-আযকার: যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।
কবর যিয়ারত: কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারারাত্র ব্যয় করে দেয়া জায়িয হবেনা। সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোন কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবে।
দান-ছদকা: গরীব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবে, যার দ্বারা হাবীবুল্লাহ হওয়া যায়।
দোয়া-ইস্তিগফার: আল্লাহ পাক-উনার নিকট দোয়া করবে, যার কারণে আল্লাহ পাক খুশি হবেন ও উনার নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবে, যার মাধ্যমে বান্দাহর সমস্ত গুণাহ-খতা মাফ হয়ে আল্লাহ পাক-উনার খালিছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। অর্থাৎ শ’বে বরাতের বারাকাত, ফুয়ূজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়।
স্মরণীয় যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, লোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলতঃ মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহেছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননা, হাদীছ শরীফে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে- “ফজর বা ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত আল্লাহ পাক তিনি দোয়া কবুল করেন।” অতএব, সকলের উচিৎ হবে মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা।
[দলীলসমূহ – (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) মাযহারী, (৩) রুহুল বয়ান, (৪) রুহুল মায়ানী, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তিরমিযী, (৮) ইবনে মাজাহ, (৯) আহমদ, (১০) রযীন, (১১) মিশকাত, (১২) মিরকাত, (১৩) আশয়াতুল লুময়াত, (১৪) লুময়াত, (১৫) ত্বীবী, (১৬) ত্বালীক, (১৭) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।]
শবে বরাতে ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে সারারাত্র ওয়াজ মাহফিল করা
শবে বরাত হচ্ছে ইসলামের বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্রি। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে বরাত-এর অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত্র বা নাজাতের রাত্র। এ রাতে ওয়াজ-নছীহত করার আদেশও নেই। আবার নিষেধও করা হয়নি। তবে এ রাতে দোয়া কবুল করার ও ইবাদত বন্দেগী করার কথাই হাদীছ শরীফে ব্যক্ত হয়েছে। যেমন আখিরী রসূল, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন - “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।” (মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ, আমালুল ইয়াত্তমি ওয়াল লাইলাতি)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে - “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় ইমাম-মুজতাহিদগণ বলেন যে - “বরাতের রাত্র হলো ক্ষমা ও দয়ার রাত্র, তওবা ও লজ্জিত হওয়ার রাত্র,
যিকির ও নামাযের রাত্র, ছদক্বা ও খয়রাতের রাত্র, দোয়া ও যিয়ারতের রাত্র, দুরূদ শরীফ তথা ছলাত-সালাম পাঠ করার রাত্র এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের রাত্র।”
কাজেই, বরাতের রাতে যেহেতু ওয়াজ নছীহতের আদেশও করা হয়নি এবং নিষেধও করা হয়নি, তাই মুছল্লীদেরকে বরাতের রাতের ফযীলত ও ইবাদত-বন্দেগীর নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা বাতিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ওয়াজ-নছীহত করা অবশ্যই জায়িয ও প্রয়োজন। তাই বলে, সারা রাত্র ওয়াজ করে মুছল্লীদেরকে নামায, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, দোয়া মুনাজাত ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগী হতে মাহরূম করা কখনোই শরীয়ত সম্মত নয়। বরং হাদীছ শরীফের খিলাফ। শুধু তাই নয় এতে হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা হয়। আর হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা কবীরা গুণাহর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ওয়াজ বৎসরের যে কোন দিনেই করা যায়। কিন্তু বরাতের রাত্র বৎসরে মাত্র একবারই পাওয়া যায়। যদি কেউ পরবর্তী বৎসর হায়াতে থাকে তবেই সে বরাতের রাত্র পাবে। কাজেই এই মহামূল্যবান রাত্রকে শুধুমাত্র ওয়াজ করে ও শুনে অতিবাহিত করে দেয়া সুন্নতের খিলাফ।
আর সুন্নতের খিলাফ কাজ করে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি কস্মিনকালেও হাছিল করা সম্ভব নয়। মূলকথা হলো, বরাতের রাত্র মূলতঃ ইবাদত-বন্দেগীর রাত্র, সারা রাত্র ওয়াজ করে ইবাদত বন্দেগীতে বিঘ্ন ঘটানো এবং মানুষদেরকে ইবাদত থেকে মাহরূম করা সম্পূর্ণরূপেই শরীয়তের খিলাফ। এ ধরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
[দলীলসমূহ] (১) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মাআনী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (৬) কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত, (৭) ইবনে মাজাহ, (৮) মিশকাত, (৯) মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তালিকুছ ছবীহ, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাতি ইত্যাদি]
শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বা গোশত রুটি পাকানো
উল্লেখ্য, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরী করা শরীয়তে নাজায়িয নয়। শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ করে আমাদের দেশ ও তার আশ-পাশের দেশসমূহে যে রুটি-হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেঁস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলোনা তখন মানুষ সাধারণতঃ সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুসাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের সফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণতঃ সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন তারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।
বিশেষ করে মুসাফিরগণ শবে বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তখন তাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যাবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়। আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু তারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন। এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, কোন আমলের ক্ষেত্রেই বদ রছম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়িয নেই।
এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি শবে বরাত উপলক্ষে রছম-রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িয নয় বরং কেউ যদি তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই অশেষ ফযীলত ও নেকীর কারণ হবে।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে - “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ো তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারিমী)
*****************
সংকলন - কিতাবুল ইলম
-----------------
ছলাতুত তাসবীহ নামায:-
https://www.facebook.com/groups/173687513131278/permalink/218762705290425/
-------------
ইস্তিগফার ও তওবা লিংক :-
https://www.facebook.com/groups/173687513131278/permalink/218824218617607/
------------------------
তাহাজ্জুদ নামায: লিংক
https://www.facebook.com/groups/173687513131278/permalink/218858321947530/

__