ইসলামের আলোকে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা



গত শতাব্দীতে আমেরিকায় শিকাগো শহরে অধিকার আদায়ের একটি মিছিলে গুলি করে হত্য করা হয় কয়েকজন নিরীহ শ্রমিককে । পরবর্তীতে এই ঘঠনাকে কেন্দ্র করে দিনটিকে শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করা হয়। বর্তমানে বিশ্ব যখন একটি ছোট্ট গ্রামে (গ্লোবাল ভিলেজ) পরিণত হয়েছে। একটির সঙ্গে আরেকটির সীমান্ত লাগানো। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের স্বার্থ জড়িত। তখন শ্রম দিবস পালিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। ইংরেজি বর্ষের পঞ্চম মাস মে'র প্রথম দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক অ্রমিক দিবশ হিসাবে। এমতাবস্থায় আমাদের কর্তব্য আন্তর্জাতিক সন্মান, শ্রমিক ও মানবাধিকার প্রভৃতি দিবশ উপলক্ষে ইসলামের শ্রমিকের অধিকার কিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে তা সবার সামনে উপস্থাপন করা। কারণ ইসলামই সেই ধর্ম প্রথম যে মানবাধিকারের বিধান প্রবর্তন করেছে। যেমন ইসলামই শ্রম ইতিহাসে সর্বপ্রথম শ্রমিকের প্রতি যথার্থ দৃষ্টি দিয়েছে। তাকে দিয়েছে সন্মান ও মর্যাদা আর শ্রমের স্বীকৃতি। পক্ষান্তরে কোন কোন সনাতন ধর্মে শ্রমের অর্থ ছিল দাসত্ব বশ্যতা । আবার কোন ধর্মে এর অর্থ ছিল লাঞ্চনা ও অবমাননা ।ইসলাম সমাজে আর দশজন সদস্যের মত নাগরিক হিসাবে তাদের প্রকৃতিক অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দিয়েছে। তেমনি শ্রমিক হিসাবে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে অনেক মূলনীতি ও বিধিও প্রবর্তন করেছে। যাতে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়। তাসের ইহ ও পরকালীন জীবনে তাদের ও তাদের পরিবারের সন্মানিত জীবন লাভ হয়। এভাবে ইসলাম শ্রমগ্রহীতার প্রতি আহবান জানিয়েছে শ্রমিকের সঙ্গে মানবিক ও সন্মান জনক আচরণ করতে। তার প্রতি মমতা দেখাতে । তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাকে বারণ করেছে তার সাধ্যাতীত কাজের নির্দেশ প্রদান থেকে। এমনকি নানা অধিকার সুযোগ নিশ্চিত করেছে ইসলাম শ্রমিকের জন্য। শ্রমগ্রহীতার কাধে যা সব বাধ্যবাদকতা আরোপ করা হয়েছে তার মধ্যে সবচে গুরুত্বপূর্ভ হল শ্রমের মুল্য বা মজুরী । সেহেতু ইসলাম এর প্রতি অত্যদিক গুরুত্ব আরোপ করেছে।আমরা দেখেছি ইসলাম কিভাবে কাজ বা শ্রমকে ইবাদত হিসাবে গন্য করে। কীভাবে একে সকল ইবাদতের ওপর স্থান দেয়।আর শ্রমের এই পবিত্র দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে ইসলাম শ্রমিকের মজুরী বা পারিশ্রমিককেও পবিত্র ঘোষনা করে।উদ্বুদ্ধ করে যাতে সকল শ্রমিককে তার শ্রমের মুল্য পরিশোধ করা হয়। পবিত্র কুরআনে অনেক যায়গায় 'আযর' বা বিনিময় শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। আবার অসংখ্য হাদিসেও শ্রমের বিনিময়ের প্রতি বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শ্রমিকের অধিকার আদায়ে রসুল সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর ঘোষণা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, শ্রমিকের গায়ের গাম শুকিয়ে যাওয়ার আগে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও 
(ইবনে মাজাহ)
রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই আল্লাহ তায়ালা যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তা- খেতে দাও, যা তুমি নিজে খাও, তাকে তা- পরিধান করতে দাও, যা তুমি নিজে পরিধান কর।” (বুখারী)
কিয়ামতের দিন শ্রমিকের পক্ষে মহান আল্লাহ দাঁড়াবেন 
'হযরত আবু হুরাইরা রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সা বলেছেন যে, মহান আল্লাহ ফরমান জারি করেছেন যে কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেব
. যে ব্যক্তি আমার নামে শপথ করে, প্রতিশ্রুতি দেয় অতঃপর ওয়াদা ভঙ্গ করে 
. যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন লোক কে বিক্রি করে মূল্য খেয়ে ফেলল (তাকে কৃতদাস বাণিয়ে দিল) এবং 
. যে ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ করে কাজ আদায় করে নিল কিন্তু শ্রমের পারিশ্রমিক প্রদান করল না 
(বুখারী-মুসলিম)
ইসলামের ইতিহাস পড়লে আমরা দেখি শ্রমের দাতা ও গ্রহিতার মধ্যে বৈষম্য ইসলামে ছিলনা এবং নেই যেমন নিচের কিছু ঘঠনা পড়ে অনুমান করতে পারেন। নবী-রাসূলগণ শ্রমিকদের কত মর্যাদা দিয়েছেন ইসলামের সব নবী ছাগল চরিয়ে নিজে শ্রমিক হয়ে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন
হযরত আবু হুরাইরা (রঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী (সঃ)  থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সঃ) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা যথ নবী পাঠিয়েছেন সকলে ছাগল চরায়েছেন সাহাবীগণ বললেন হে আল্লাহর রাসূল আপনিও কি চরায়েছেন ? তখন রাসূল সা বললেন হ্যাঁ! আমি কয়েক কেরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরায়েছি (শ্রম খেটেছি) 
তাহলে বুঝা যায় মুসলিম কোন প্রকারেই শ্রমিককে হেয় করতে পারেনা।
মালিক হযরত শোয়াইব (আঃ) তাঁর মেয়ের বিয়ে দিয়ে শ্রমিক নবী মূসাকে (আঃ) জামাই বানিয়েছেন
রসুল (সঃ) শ্রমিক যায়েদ (রাঃ)-এর কাছে আপন ফুফাতো বোন জয়নবের বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি (সঃ) যায়েদকে (রাঃ) মুতারের যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন
ইসলামের প্রথম মোয়াজ্জিন বানানো হয়েছিল শ্রমিক হযরত বিলালকে (রাঃ)
মক্কা বিজয় করে কাবা ঘরে প্রথম প্রবেশের সময় মহানবী (সা.) শ্রমিক বেলাল (রাঃ) শ্রমিক খাব্বাবকে (রাঃ ) সাথে রেখে ছিলেন নবীজী কখনো নিজ খাদেম আনাসকে (রাঃ) ধমক দেননি এবং কখনো কোনো প্রকার কটুবাক্য কৈফিয়ত তলব করেননি
আরো অসংখ্য হাদিসে আমরা দেখতে পাই শ্রমিকের মর্যাদা কত উর্ধে । তাই পহেলা মে তথাকথিত শ্রমিক দিবস পালন নয় । ইসলাম ও শ্রমিকের অধিকার পর্যালোচনার দিবস বলেই আখ্যেয়িত করা যুক্তিযুক্ত।

No comments:

__