ফীহি মা ফীহি (মওলানা রূমীর উপদেশ বাণী)


ফীহি মা ফীহি (মওলানা রূমীর উপদেশ বাণী)


উপদেশ বাণী
মওলানা রূমী (রহ:) বলেন: মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) একবার এরশাদ ফরমান, “উলেমাদের মধ্যে সবচেয়ে মন্দ হলো তারা, যারা রাজা-বাদশাহর দর্শনপ্রার্থী বা দ্বারস্থ হয়; আর রাজা-বাদশাহদের সেরা হলেন তাঁরা, যারা উলেমা (--হক্কানী/রব্বানী)-বৃন্দের দর্শনপ্রার্থী হন যে রাজা গরিবের দ্বারে গিয়ে দাঁড়ান, তিনি- জ্ঞানী; আর যে গরিব লোকেরা রাজার দ্বারস্থ হয়, তারা হতভাগা।”
এক্ষণে এই হাদীসের বাহ্যিক অর্থ থেকে মানুষেরা মনে করে উলেমাবৃন্দের কখনোই রাজা-বাদশাহদের দ্বারস্থ হওয়া উচিত নয় নতুবা তাঁরা সবচেয়ে মন্দ আলেমে পরিণত হবেন আসলে এটি প্রকৃত অর্থ নয় বরঞ্চ সবচেয়ে মন্দ আলেমবর্গ রাজা-বাদশাহদের ওপর নির্ভর করে, আর তাদের জীবন উদ্দেশ্য রাজা-বাদশাহদের মনোযোগ সু-নজরপ্রাপ্তির আবর্তে ঘুরে ওই ধরনের আলেম পড়ালেখা শেখে রাজা-বাদশাহদের কাছ থেকে উপহারসামগ্রী সম্মান লাভ এবং উচ্চপদ পাওয়ার আশায়
অতএব, ওই ধরনের আলেম নিজেদের উন্নত করে এবং জ্ঞানার্জন করে রাজা-বাদশাহদের বদৌলতে তারা আলেম হয় নিজেদের রাজা-বাদশাহদের ভয়ে তারা রাজার নিয়ন্ত্রণে নিজেদেরকে ছেড়ে দেয় রাজা-বাদশাহবর্গ তাদের জন্যে যে পরিকল্পনার ছক আঁকে, সেটির সাথেই তারা নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয় তাই তারা রাজার দ্বারস্থ হোক, অথবা রাজাই তাদের দ্বারে যাতায়াত করুক, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা হচ্ছে দর্শনপ্রার্থী; আর রাজা হলো দর্শনদাতা
কিন্তু উলেমাবৃন্দ যখন রাজা-বাদশাহদের তুষ্টির জন্যে জ্ঞানান্বেষণ করেন না, বরং প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সত্যের খাতিরেই জ্ঞানচর্চা করেন যখন তাঁদের কথা কাজ তাঁদেরই শেখা সত্যাশ্রয়ী হয় সত্যের জন্যেই ব্যবহৃত হয়, কেননা এটি- তাঁদের প্রকৃতি এবং এটি ব্যতিরেকে তাঁদের জীবন অর্থহীন, মাছ যেমন না-কি শুধু পানিতে বাঁচতে সক্ষম তবে ওই শ্রেণির আলেম খোদাতা’লার নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনায় নিজেদের সমর্পিত করেন নিঃসন্দেহে তাঁরা আম্বিয়া (:)-মণ্ডলীর হেদায়াত (সঠিক পথনির্দেশনা) দ্বারা আশীর্বাদধন্য হন তাঁদের সময়কার সকলেই নিজেদের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে তাঁদেরই (আদর্শের) ছোঁয়া পান এবং তাঁদের দৃষ্টান্ত থেকে অনুপ্রেরণাও লাভ করেন
ধরনের আলেম-উলেমা (--হক্কানী/রব্বানী) কোনো রাজার দর্শনার্থী হলেও বাস্তবে তাঁরাই হলেন দর্শনদাতা, আর রাজা হলেন দর্শনপ্রার্থী কেননা, প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজা- এসব আলেমের কাছ থেকে গ্রহীতা এবং তাঁদের সাহায্য-প্রাপকও রকম আলেম রাজা-বাদশাহদের ওপর মোটেও নির্ভরশীল নন তাঁরা হলেন আলো বিচ্ছুরণকারী সূর্যের মতো, যার সামগ্রিক কাজ- হলো সবাইকে দান করা, সর্বজনীনভাবে; যেমন, সাধারণ পাথরকে দামী মণিমানিক্যে রূপান্তর করা, পাহাড়পর্বতকে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র ইস্পাতের খনিতে পরিণত করা, ভূ-ভাগকে ঊর্বর শস্যশ্যামল করা, গাছ-গাছালিকে ফলবতী করা এবং ঠাণ্ডা বাতাসে উষ্ণতা নিয়ে আসা তাঁদের কারবার- হলো দান করা, তাঁরা গ্রহীতা হন না আরবীয় সমাজ একটি প্রবাদ বাক্যে এটি ব্যক্ত করেন:
আমরা শিখেছি করতে দান-সদকাহ,
শিখিনি কভু হতে গ্রহীতা।”
অতএব, যে উপায়েই তাঁদের সাথে দেখা করেন না কেন, রাজা-বাদশা- হলেন এক্ষেত্রে তাঁদের দর্শনপ্রার্থী
এক্ষণে আমার মনে এক ভাবনার উদ্রেক হয়েছে যে আল-কুরআনের কোনো আয়াতের উদ্ধৃতি দেই, যদিও তা বর্তমান আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয় তথাপি এই চিন্তা আমার মনে এসেছে এখন, আর আমি তা ব্যক্ত করতে চাই যাতে তা লিপিবদ্ধ হয় আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান:
হে রাসূল, আপনার হাতে বন্দী লোকদের বলুন, আল্লাহতা’লা তোমাদের অন্তরে ভালো কিছু থাকলে তিনি যা নিয়েছেন, তার চেয়েও বেশি দান করবেন; আর তিনি তোমাদের ক্ষমা- করবেন নিশ্চয় আল্লাহতালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতি দয়াবান।” [সরাসরি অনুবাদ]
আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (:)-এর প্রতি সে সময় নাযেল হয়েছিল, যখন তিনি (মক্কার) অবিশ্বাসীদেরকে পরাভূত করেছিলেন; (যুদ্ধে) কেউ কেউ হয়েছিল নিহত, আর অনেকে  হয়েছিল হাত পায়ে শেকলবন্দী ওই বন্দীদের মধ্যে ছিলেন তাঁরই চাচা হযরত আব্বাস (রা:)- শেকলাবদ্ধ বন্দীরা তাদের গ্লানিকর অসহায়ত্বে সারা রাত কেঁদেছিলেন এবং মাতম- করেছিলেন তারা নিজেদের জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তরবারির ফায়সালা- আশঙ্কা করছিলেন ওই সময় দৃশ্য দেখে মহানবী (:)-এর ঠোঁটে স্মিতহাস্যরেখা ফুটে ওঠে
বেদনাক্লিষ্ট বন্দীরা বল্লেন, “দেখো, তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) মাঝে শেষমেশ একজন মানুষের বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে তিনি এক মহামানব হওয়ার যে দাবি করা হয়, তা সত্য নয় আমরা বন্দীরা শেকলাবদ্ধ দেখে তিনি ওখানে দাঁড়িয়ে আনন্দ অনুভব করছেন নিজ প্রবৃত্তির অনুগত অন্য যে কারো মতো যখন- সে শত্রুদের ওপর বিজয় লাভ করে এবং তাদেরকে নিজ মর্জি-মাফিক ধ্বংস করতে পারে, আর এতে আনন্দ সুখ খুঁজে পায়।”
মহানবী (:) বন্দীদের অন্তরের খবর জেনে বল্লেন, “না, তা মোটেও নয় আমি কখনোই আমার হাতে পরাস্ত শত্রুদের বিপর্যস্ত অবস্থা কিংবা দুঃখকষ্ট দেখে হাসাহাসি করবো না তবে আমি উৎফুল্লবোধ করছি এবং হাসছি কারণে যে, অন্তর্দৃষ্টি (দিব্যদৃষ্টি) দ্বারা আমি দেখতে পাচ্ছি মানুষদেরকে জামার কলার’ শেকলে ধরে আমি জাহান্নামের কালো ধোঁয়া থেকে বের করে জান্নাতে দাখিল করছি; আর তারা কাঁদছে এবং অভিযোগ করছে এই বলে, ‘কেন আপনি আমাদেরকে এই আত্মবিনাশী গর্ত থেকে বের করে ওই নিরাপত্তাপূর্ণ বাগানে নিয়ে যাচ্ছেন?’ এমতাবস্থায় হাসি আমাকে আপ্লুত করছে
কিন্তু যেহেতু তোমাদেরকে এখনো ওই দিব্যদৃষ্টি দেয়া হয়নি যা আমাকে দেয়া হয়েছে, সেহেতু আমি তোমাদের বলছি, শোনো! আল্লাহ পাক তোমাদেরকে কথা জানানোর জন্যে আমাকে আদেশ করেছেন যে, প্রথমে তোমরা সৈন্য জড়ো করে তোমাদেরই শৌর্যবীর্যের ওপর নির্ভর করে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেছো তোমরা নিজেদের বলেছো, ‘আমরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জয়ী হবো এবং তাদেরকে নির্মূল করবো।’ কিন্তু তোমরা তোমাদের চেয়েও (সর্ব)-শক্তিমানের ওই ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারো নি আর তাই তোমরা যা কিছু পরিকল্পনা করেছিলে, সবই উল্টো হয়েছে এখনো তোমাদের ভয়-ভীতির মাঝেও তোমরা নিজেদের (ভ্রান্ত) বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে আছো এবং একক (পবিত্র) সত্তার বাস্তবতা দর্শনে ব্যর্থ হচ্ছো ওই (ঐশী) ক্ষমতা দর্শনের পরিবর্তে তোমরা আমার শক্তিকেই গণনায় নিয়েছো কেবল; কারণ আমার দ্বারা বিজিত হওয়ার ব্যাপারটি তোমাদের কাছে বেশি সহজে গ্রহণযোগ্য
তথাপি তোমাদের বর্তমান অবস্থাতেও আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যদি আমার ক্ষমতাকে স্বীকার করো এবং সকল অবস্থায় তোমাদের লয়কে আমার ইচ্ছাধীন বলে মেনে নাও, তাহলেও আমি তোমাদেরকে এই দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারবো ওই মহান সত্তা যিনি সাদা বৃষের ঔরসে কালো বৃষের জন্ম দিতে সক্ষম, তিনি অবশ্যই কালো বৃষের ঔরসে সাদা বৃষের জন্ম- নিশ্চিত করতে সক্ষম তোমাদের ইতিপূর্বেকার রীতি পরিত্যাগ করো, আমিও একইভাবে তোমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া সহায়-সম্পত্তি তোমাদের কাছেই আবার ফিরিয়ে দেবো; বস্তুতঃ আরও কয়েকগুণ বেশি দেবো অধিকন্তু, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত অভিযোগ থেকে তোমাদেরকে অব্যাহতি দেবো, আর ইহলোক পরলোকে তোমাদের সমৃদ্ধি কল্যাণ মঞ্জুর করবো।”
অতঃপর হযরত আব্বাস (রা:) বলেন, “আমি তওবা করছি এবং পূর্ববর্তী রীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি।”
রাসূলুল্লাহ (সঃ) এতদশ্রবণে বলেন, “আপনি যে দাবিটি করছেন, খোদাতা’লা তার একটি প্রতীক বা নমুনা দেখতে চান; কেননা ভালোবাসার বড়াই করা সহজ, কিন্তু এর প্রমাণ ভিন্ন কথা।”
হযরত আব্বাস (রা:) পাল্টা প্রশ্ন করেন, “কী ধরনের প্রতীক বা নমুনা আপনি দেখতে চান?”
হুযূর পূর নূর (সঃ) জবাবে বলেন, “আপনার কাছে অবশিষ্ট যে অর্থসম্পত্তি আছে, তা ইসলামী বাহিনীকে দান করুন, যাতে বাহিনী শক্তিশালী হতে পারে অবশ্য তা তখন- হতে পারে, যখন আপনি সত্যিকার মুসলমান হবেন এবং ইসলাম মুসলমানদের ভালাই কামনা করবেন।”
হযরত আব্বাস (রা:) বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার কাছে আর কী থাকবে? তারা আমার থেকে সবই কেড়ে নিয়েছে, ঘর ছাওয়ার জন্যে ব্যবহৃত নলখাগড়ার শুকনো কাণ্ডনির্মিত ফরাশ- রাখেনি।”
মহানবী (সঃ) জবাবে বলেন, “দেখুন, আপনি তো আপনার পূর্ববর্তী রীতি পরিত্যাগ করেননি আপনি এখনো সত্যের বিভা দর্শন করেননি আমি কি আপনাকে বলবো কী পরিমাণ সম্পত্তি এখনো আপনার মালিকানাধীন আছে? কোথায় তা আপনি লুকিয়ে রেখেছেন? কার জিম্মাদারিতে তা রেখেছেন? কোথায় তা লুকিয়ে বা পুঁতে রেখেছেন?”
হযরত আব্বাস (রা:) বিস্ফোরিত কণ্ঠে বলেন, “আল্লাহ মাফ করুন!”
রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরপর বলেন, “আপনি কি আপনার মায়ের জিম্মাদারিতে অতো পরিমাণ সম্পত্তি গচ্ছিত রাখেননি? অমুক দেয়ালের নিচে আপনি কি আপনার স্বর্ণ পুঁতে রাখেননি? আপনি কি আপনার মায়ের কাছে বিস্তারিতভাবে বলেননি কথা – ‘আমি ফিরতে পারলে সম্পত্তি আমাকে ফেরত দেবেন; কিন্তু নিরাপদে না ফিরলে অতো পরিমাণ অমুক কাজে এবং অতো পরিমাণ তমুক লোককে দেবেন; আর অতো পরিমাণ আপনার জন্যেই রেখে দেবেন?”
হযরত আব্বাস (রা:) কথা শোনার পর পূর্ণ আনুগত্যে হাত উত্তোলন করেন এবং বলেন, “এয়া রাসূলাল্লাহ (সঃ)! ইতিপূর্বে আমি সবসময় মনে করতাম আপনি হামান, শাদ্দাদ, নমরুদ অন্যান্য অতীতকালের রাজা-বাদশাহর (জৌলুসময়) ভাগ্য বহন করে চলেছেন কিন্তু আপনার কথা শুনে এখন আমি জানি, আপনার এই নেয়ামত (আশীর্বাদ) খোদায়ী (ঐশী) কোনো দান, যা অপার্থিব এবং যা স্বয়ং খোদার আরশ থেকে এসেছে।”
মহানবী (:) জবাবে বলেন, “এবার আপনি সত্য কথা বলেছেন আপনার মধ্যে লুক্কায়িত সন্দেহের কোমরবন্ধ ছিঁড়ে যাওয়ার শব্দ আমি শুনেছি আমার আত্মার অন্তঃস্থলে একখানা কান আমার আছে, যা দ্বারা কারো অন্তরে সন্দেহ টুটে যাওয়া আমি শুনতে পাই আপনি যে এখন বিশ্বাস করেন (দ্বীন ইসলামে), বিষয়টি সত্য।”
আমি ঘটনাটি আমীর (শাসক)-কে জানিয়েছিলাম যে উদ্দেশ্যে তা হলো, শুরুতে আপনি (আমীর সাহেব) মুসলমান রাজ্যের নিশান-বরদার তথা পতাকা উড্ডীনকারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন আপনি বলেছিলেন,  “আমি নিজেকে মুক্তিপণস্বরূপ পেশ করছি; আমি নিজ আশা-আকাঙ্ক্ষা, বিচার-বিবেচনা কোরবানী করছি যাতে ইসলাম ধর্ম নিরাপদ শক্তিশালী থাকে।” কিন্তু যেহেতু আপনি খোদার চিন্তা ভুলে এবং সব কিছু তাঁরই সৃষ্ট কথা মনে না রেখে আপনার নিজস্ব পরিকল্পনার ওপর আস্থা রেখেছিলেন, সেহেতু আপনার সমস্ত উদ্দেশ্যরই উল্টোটা হয়েছে তাঁতারদের সাথে আঁতাত করে আপনি অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদেরকে সিরীয় মিসরীয়দের ধ্বংস করতে সহায়তা করছেন, যার পরিণতিতে ইসলামী রাজ্যেরই বিনাশ সাধন হতে পারে এমতাবস্থায় আপনি ইসলাম ধর্মের টিকে থাকার জন্যে যে পরিকল্পনা করেছেন, খোদাতা’লা তারই বিনাশ সাধন করেছেন
অতএব, খোদার দিকে মুখ ফেরান, কেননা পরিস্থিতি বিপজ্জনক ওহে বন্ধু, তবু আপনার বর্তমান অবস্থাতেও নিরাশ হবেন না, বরং খোদার ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণ করুন আপনি মনে করেছিলেন আপনার আত্মিক শক্তি বুঝি আপনার নিজেরই, ঠিক যেমনিভাবে হযরত আব্বাস (রা:) অন্যান্য বন্দীরা তা- ভেবেছিলেন; এর ফলে আপনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন রাসূলুল্লাহ (সঃ) যেমন ওই বন্দীদের দুঃখকষ্টে হেসেছিলেন, আমিও তেমনি আপনার বিব্রতকর অবস্থায় উৎফুল্লবোধ করছি কেননা, এই দুর্বলতা কষ্টভোগ থেকে যা হারিয়েছে তার চেয়েও বড় কিছু অর্জিত হতে পারে অতএব, নিরাশ হবেন না; কারণ
খোদাপ্রদত্ত স্বস্তিতে কেউ হয় না নিরাশ,
ব্যতিক্রম শুধু যারা করে অবিশ্বাস।” 
আমীরের সাথে আমার এভাবে কথা বলার উদ্দেশ্য ছিল তিনি যাতে সব বিষয় সঠিক দৃষ্টিকোণ্ থেকে বিবেচনা করতে পারেন এবং খোদার ইচ্ছা সবিনয়ে মেনে নিতে পারেন তিনি অত্যন্ত উচুঁ মর্যাদা থেকে অধঃপতিত হয়েছেন; তবু উপায়ে হয়তো তাঁর উন্নতি হতে পারে জীবন সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বস্তুসমূহ (আমাদের) প্রদর্শন করতে পারে, কিন্তু এগুলোর উৎস সম্পর্কে ভুলে গেলে এগুলোর পেছনে লুকোনো রয়েছে এক বড় ফাঁদ আল্লাহতা’লা- এই মহা-পরিকল্পনা করেছেন যাতে আমরা নিজেদের আত্মম্ভরিতা অন্তঃসারশূন্যতার দরুন সকল পরিকল্পনা ভাবনাকে নিজেদের বলে দাবি না করতে শেখি
সব কিছু যদি যেভাবে বাহ্যতঃ দেখা যায় সে মোতাবেক সত্য হতো, তবে মহানবী (সঃ) এতো তীক্ষ্ণ, এতো আলোকিত অন্তর্দৃষ্টি (দিব্যদৃষ্টি) দ্বারা আশীর্বাদধন্য হওয়া সত্ত্বেও আরয করতেন না
হে প্রভু, সকল বিষয়ের প্রকৃত অবস্থা আমায় করুন প্রদর্শন;
আপনি যে বস্তুকে দেখান সুদর্শন, বাস্তবে তার বিশ্রী আবরণ;
আপনি যে বস্তুকে দেখান কদাকার, প্রকৃতপ্রস্তাবে তা সুদর্শন;
আমাদের প্রতিটি বস্তু সেভাবে দেখান, যেটির বাস্তব অবস্থা যেমন,
যাতে আমাদের না হয় সেটির ফাঁদে পতন।”
এক্ষণে তোমাদের বিচারবুদ্ধি যতো ভাল স্পষ্ট- হোক না কেন, তা নিশ্চয় মহানবী (সঃ)-এর বিচারবুদ্ধির চেয়ে শ্রেষ্ঠতর নয় অতএব,  (তোমাদের) প্রতিটি চিন্তা ধারণার ওপর আস্থা রেখো না, বরং খোদাতা’লার প্রতি তাঁর ঐশী জ্ঞান-প্রজ্ঞার ওপর আস্থা রেখো

-------------
চলবে

No comments:

__