কদর রাতের পরে যা হবে—
সুরা কদরে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,- “ সালামুন হিয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজর”। অর্থাৎ – “শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত”।
এর পরের ঘটনা জানুন –
কদরের রজনীতে জিব্রাইল (আ.) সকল ইমানদারদের সাথে করমর্দন করেন। তাঁর করমর্দনের সময় মুমিন ব্যক্তির শরীরের লোমকুপ খাড়া হয়ে যায়। মন কোমল হয় এবং চোখে অশ্রুধারা নেমে আসে। এসব নিদর্শন দেখা দিলে বুঝতে হবে , তার হাত হজরত জিব্রাইল (আঃ)-এর হাতের মধ্যে রয়েছে।
ফজরের পর জিব্রাইল (আঃ) সমস্ত ফেরেস্তাদের নিয়ে উপরে দিকে উঠে যান এবং অনেক উপরে উঠে স্বীয় পালক ছড়িয়ে দেন অতপর তিনি সেই দুটি সবুজ পালক প্রসারিত করেন, যা অন্য কোন সময় প্রসারিত করেননা। এর ফলে সূর্যের কিরণ মলিন ও স্থিমিত হয়ে যায়। তারপর তিনি সমস্ত ফেরেশতাদের ডাকিয়ে নিয়ে যান। সব ফেরেশতা উপরে উঠে গেলে তাদের নুর এবং জিব্রাইল (আঃ) এর পালকের নুর মিলিত হয়ে সুর্যের কিরণকে নিস্প্রভ করে দেয়। ঐ দিন সূর্য অবাক হয়ে যায়। সকল ফেরেশতা সেদিন আকাশ ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানের ইমানদার নারী-পুরুষের জন্য রহমত কামনা করে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। তারা ঐ সব লোকের জন্যও দোয়া করেন, যারা সৎ নিয়তে রোযা রাখে এবং সুযোগ পেলে পরবর্তী রমযান মাসেও আল্লাহর ইবাদত করার মনোভাব পোষন করে।
সন্ধ্যায় সবাই প্রথম আসমানে পৌঁছে যান। সেখানে অবস্থানকারী ফেরেশতারা এসে পৃথিবীতে অবস্থানকারী ঈমানদারদের অমুকের পুত্র অমুক।অমুকের কন্যা অমুক বলে বলে খবরাখবর জিজ্ঞেস করেন। নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর কোন কোন ব্যক্তি সম্পর্কে ফেরেশতারা বলেন : তাকে আমরা গত বছর এবাদতে লিপ্ত দেখেছিলাম, কিন্তু সে এবারে বিদআতে লিপ্ত দেখে এসেছি। প্রশ্নকারী ফেরেশতা তখন শেষোক্ত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত ও রহমতের দোয়া করেন। ফেরেশতারা প্রশ্নকারী ফেরেশতাদেরকে আরো জানান যে, তারা অমুক অমুককে আল্লাহর জিকর করতে দেখেছেন। অমুক অমুককে রুকুতে এবং অমুক অমুককে সিজদায় পেয়েছেন। অমুক অমুককে কুরআন তিলাওয়াত করতে দেখেছেন। একরাত একদিন প্রথম আসমানে কাটিয়ে তারা দ্বিতীয় আসমানে গমন করেন। সেখানেও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়। এভাবে তারা তাদের স্থান সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে পৌছেন। সিদরাতুল মুনতাহা তাদেরকে বলে : আমাতে অবস্থানকারী হিসাবে তোমাদের প্রতি আমার দাবি রয়েছে। আল্লাহকে যারা ভালবাসে আমিও তাদেরকে ভালবাসি।আমাকে তাদের অবস্থার কথা শোনাও। তাদের নাম শোনাও। হজরত কাব (রঃ) বলেন : ফেরেশতারা তখন আল্লাহর পুণ্যবান বান্দাদের নাম ও পিতার নাম জানাতে শুরু করেন। তারপর জান্নাত সিদরাতুল মুনতাহাকে সম্বোধন করে বলে: তোমাতে অবস্থানকারী তোমাকে যা শুনিয়েছোট সে সব আমাকে একটু শোনাও। তখন সিদরাতুল মুনতাহা জান্নাতকে সব শুনিয়ে দেয়। শোনার পর জান্নাত বলে : অমুক পুরুষ ও নারীর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ্ ! অতি শীঘ্রই তাদেরকে আমার সাথে মিলিত করুন।
হজরত জিব্রাইল (আঃ) সর্বপ্রথম নিজের যায়গায় পৌঁছে যান। তাঁর উপর তখন ইলহাম হয় এবং তিনি বলেন : হে আল্লাহ! আমি আপনার অমুক অমুক বান্দাকে সিজদারত অবস্থায় দেখেছি। আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ তা'আলা তখন বলেন : আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। হজরত জিব্রাইল (আঃ) তখন আরশ বহনকারী ফেরেশতাদেরকে এ কথা শুনিয়ে দেন। তখন ফেরেশতা বলাবলি করে যে , অমুক অমুক নারী পুরুষের উপর আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত হয়েছে। তারপর হজরত জিব্রাইল (আঃ) বলেন, হে আল্লাহ ! গত বছর আমি অমুক অমুক ব্যক্তিকে সুন্নতের উপর আমলকারী এবং আপনার এবাদতকারী হিসেবে দেখেছি কিন্তু এবার সে বিদআতে লিপ্ত হয়ে পরেছে এবং আপনার বিধিবিধানের অবাধ্যতা করেছে। তখন আল্লাহ তাবারকা ওয়া তা'আলা বলেন, হে জিব্রাইল (আঃ) , সে যদি মৃত্যুর তিন মিনিট পূর্বেও #তওবা করে নেয়, তাহলে আমি তাকে মাফ করে দিবো তখন জিব্রাইল আঃ হঠাৎ করে বলেন , হে আল্লাহ আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। আপনি সমস্ত প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।।
(তপসীর ইবনে কাছীর থেকে)
#কদর
#ইসলাম_ই_মুক্তির_দিশা
No comments:
Post a Comment