হযরত সুলতানুল মাশায়েখ মাবুবে এলাহি নিজামউদ্দীন আউলিয়া কুদ্দেসি সির রুহুল আজীজ তার রচনায় বর্ণনা করেছেন যে ৬৫৫ হিজরীর রজব মাসের ১০ তারিখে বুধবার আমি হযরত সায়্যেদুল আবেদীন সন্দুল আরেফীন খাজা শায়খ ফরিদউদ্দীন মাসউদ গঞ্জেশকর্ রহমতুল্লাহি আলাইহির কদমবুসি লাভের সৌভাগ্য অর্জন করলাম। তিনি তাঁর পবিত্র দয়া ও করুণা দ্বারা আমাকে শিষ্যত্বে স্থান দিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে কুল্লাহ চাহার তকী (চার টুকরা কাপড়ের তৈরী এক ধরনের টুপী) তাঁর খিরকার (আজানু লম্বা জামা) পকেট হতে বের করে আমাকে পরিয়ে দিলেন এবং সেই সঙ্গে তাঁর নিজের পবিত্র খিরকা ও এক জোড়া খড়মও দান করলেন এবং এরশাদ করলেন, "আমার ইচ্ছা ছিলো হিন্দুস্থানের বেলায়েত কোন অন্য ব্যক্তিকে প্রদান করবো কিন্তু তুমি রাস্তায় ছিলে তাই আমার প্রতি আল্লাহ্ তায়ালার ইলহাম হলো, "এ নেয়ামত নিজামউদ্দীনের প্রাপ্য, যখন সে আসবে, তাকে দান করবে।" এরপর আমার ইচ্ছা হলো প্রারম্ভিক প্রেমের নিদর্শন স্বরূপ আর একবার কদমবুসি করবো। কিন্তু তাঁকে দেখার পর এমন বিহ্বল ও ভীত হয়ে পড়লাম যে আমি আমার সমস্ত ইচ্ছা ও বাসনা ভুলে গেলাম। হুজুর তাঁর আলোকিত অন্তর দ্বারা আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন, আমার প্রতি তোমার প্রেম উত্তপ্ত ও অত্যধিক ছিলো। তারপর বললেন, “লাকুল্লি দাখেলুন দাহাস্তা”
অর্থাত প্রত্যেক নব্য প্রবেশকারীর মনেই এরূপ ভয় সঞ্চারিত হয়ে থাকে।
এরপর বললেন, "আমার প্রতি খেয়াল করো আমি যা বলি তা অতি যত্নে মনে রাখো।”
আমি ভুলে যাবো এ সন্দেহে তিনি পুনরায় বললেন, “সেই সব মুরীদই ভাগ্যবান যারা পীরের মুখ হতে নিঃসৃত বাণী অতি মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে এবং লিখে রাখে। যারা এরূপ করে তারা প্রতিটি অক্ষরের জন্য হাজার বছর ইবাদতের ছওয়াব লাভ করবে এবং ইহলোক ত্যাগ করার পর শ্রেষ্ঠ বেহেস্তে স্থান পাবে।”
তারপর তিনি নিম্নোক্ত কবিতার পংক্তি দু'টো আমাকে শোনালেন।
বাংলা: “আয়ে আতশে ফিরাকত দিল্হা কাবাব কার্দাহ সয়লাবে ইশতিয়াকাত জানহা খারাপ কাদাহ।”
অনুবাদ : “হে বিচ্ছেদের অগ্নি করেছো কাবাব তার অন্তর, আকাঙ্ক্ষার বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে যার প্রাণ”।
এরপর এরশাদ করলেন যে, লোকদের এমন থাকা উচিত যেন মুহাব্বাত তাদের প্রতি সর্বাবস্থায় বর্ষিত হয়, কেননা এমন কোন মুহূর্ত অতিবাহিত হয় না যখন অন্তরে এ আওয়াজ না আসে যে,
“জিন্দা দিল ওহ হ্যায় জিসমে মুহাব্বাতে খোদা হ্যায়”। অর্থাৎ সেই অন্তরই জীবিত যার মাঝে খোদার মুহাব্বাত বিদ্যমান।
দরবেশী—
এরপর 'দরবেশী' সম্বন্ধে বললেন যে, 'দরবেশীটা সম্পূর্ণ একটা গোপনীয় ব্যাপার এবং খিরকা (আজানু লম্বা জামা) পরা তারই সাজে যে মুসলমান ও অমুসলমান উভয় সম্প্রদায় লোকের সম্বন্ধে কাশফ (অন্তর্দৃষ্টি) দ্বারা বাক্যালাপ না করে এবং দুনিয়ার যে সব জিনিসপত্র তার নিকট আসে সে সবই আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় বিলিয়ে দেয়, যার মধ্য হতে একটা কানাকড়িও যেন কোন কারণে জমা করে না রাখে।
যাকাত–
এরপর এরশাদ করলেন যে আসহাবে তরীকত (তরীকতের সঙ্গীগণ) ও মাশায়েখে কুবার (সম্মানিত আধ্যাত্মিক শিক্ষক, গুরু ও পীরগণকে বুঝায়) তাঁদের উপক্রমে বর্ণনা করেছেন যে যাকাত তিন প্রকারে বিভক্ত।
(১) যাকাতে শরীয়ত (শরীয়তের নিয়মানুযায়ী যাকাত)
যাকাতে শরীয়ত হল শরীয়তের বিধান অনুযায়ী যাকাত, যেমন শতকরা ২.৫% হিসেবে (অবশ্য যে পরিমাণ টাকা থাকলে তার উপর যাকাত বর্তায়)। অর্থাৎ দু'শ টাকার জন্য ৫ টাকা যাকাত প্রদান করা।
(২) যাকাতে তরীকত (তরীকতের নিয়মানুযায়ী যাকাত)
যাকাতে তরীকতের হিসাব হচ্ছে দু'শ টাকার মধ্যে। নিজের জন্য ৫ (পাঁচ) টাকা রেখে ১৯৫ (একশত পঁচানব্বই) টাকা যাকাত, হিসেবে প্রদান করা।
(৩) যাকাতে হকিকত (আল্লাহ্ প্রাপ্তদের নিয়মানুযায়ী যাকাত)।
হকিকত পন্থীদের যাকাতের নিয়ম হচ্ছে নিজের কাছে যা থাকে সব বিলিয়ে দেয়া। অর্থাৎ দু'শ টাকা থাকলে দু'শ টাকাই বিলিয়ে দেয়া, কেননা দরবেশী হচ্ছে আল্লাহতে বিলীন হওয়ার পথ। সুতরাং লয়প্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট কোন কিছু থাকা অন্যায়।
এরপর হুজুর এরশাদ করলেন যে, আমি হযরত খাজা শায়খ শিহাবউদ্দিন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দর্শন পেয়েছি এবং তাঁর সান্নিধ্যে কয়েকদিন খেদমত করার সুযোগও লাভ করেছিলাম। তখন দেখেছি যে, এমন কোন দিন ছিলনা, যে দিন তাঁর খানকাহ্ শরীফে ১০/১২ হাজার ফুতুহ (নজর, নিয়াজ, হাদিয়া ইত্যাদি) না আসতো। কিন্তু সমস্ত জিনিস সেই দিনই তিনি আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় বিলিয়ে দিতেন। এক পয়সাও সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজের কাছে রাখতেন না। তিনি বলতেন যদি আমি যেদিনের জিনিস সেদিন বিলিয়ে না দিই তাহলে আমাকে দরবেশ বলা হবে না বরং ধনী বলা হবে। এরপর এরশাদ করলেন যে- ধৈর্য ও অভাবই হচ্ছে দরবেশের সঙ্গী। যদি দরবেশের নিকট কোন প্রকার নজর নিয়াজ (ফুতুহ) নাও আসে তবু সে বলবে না যে আমি কিছু পাইনি।
ধৈর্য ধারণ—
'সুলুকে'র কিতাবে বর্ণিত আছে, মালেক বিন্ দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন বুজুর্গের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। উভয়ে আলাপ আলোচনা করতে করতে আহারের সময় হয়ে গেলো। দরবেশের মেয়ে লবণ বিহীন দুটো গমের রুটী দুজনের জন্য সম্মুখে এনে রাখলো। দরবেশ মালেক বিন্ দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহিকে আহারের জন্য অনুরোধ জানালো। মালেক বিন্ দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর অনুরোধে শরীক হলেন। কিন্তু রুটী কামড় দিয়ে দেখেন রুটীতে লবণ নেই। তিনি বললেন, রুটীতে নিমক নেই, একটু নিমক হলে ভালো হতো। দরবেশের মেয়ে যখন এ কথা শুনলেন তখন তিনি দৌড়ে মুদি দোকানে গেলেন এবং নিজের লোটাটি বন্ধক রেখে নিমক এনে আহারের জন্য পেশ করলেন। উভয়ে নিমক সহকারে আহার ক্রিয়া সম্পন্ন করলেন। আহারের পর মালেক বিন্ দীনার (রহমতুল্লাহি আলাইহি) আল্লাহ্ তায়ালার শুকুর গুজারী করে বললেন, 'ধৈর্য ধারণ করা ভালো'। দরবেশের মেয়ে মালেক বিন্ দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এ উক্তি শুনে বললেন, "যদি আপনার নিজের ধৈর্য হাসিল হয়ে থাকতো তাহলে নিমকের জন্য আমার লোটা বন্ধক রাখতে হতোনা এবং দরবেশ বললেন, আজ ১৭ বছর হলো নিজের নফসকে নিমক হতে বঞ্চিত রেখেছি। আমি এখন এও জানিনা যে নিমকের রং কেমন! হে মালেক, তুমি কি আমাকে আহার সম্বন্ধে উপদেশ দিচ্ছ? মালেক, প্রকৃত দরবেশী অন্য জিনিস এবং পোষাকী দরবেশী অন্য জিনিস। তুমি কি জাননা দরবেশদের উপর কি ধরণের দুঃখ, কষ্ট, বালা, মসিবত, বাধা, বিপত্তি নিপতিত হয়? দরবেশের- কথায় তিনি সম্বিত ফিরে পেয়ে লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাইলেন।
খিরকা—
পরবর্তী আলোচনা খিরকা সম্বন্ধে শুরু হলো, হুজুর এরশাদ করলেন যে হযরত রাসুলে মাকবুল (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) মি'রাজ হতে ফিরে আসার পর নিজের সাহাবা রাদিআল্লাহু আনহুমদেরকে ডেকে এরশাদ করলেন যে আমার প্রতি আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশ হয়েছে যে, আমার দরবেশী খিরকা ঐ ব্যক্তিকে প্রদান করবো যে আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে। আমি জানিনা, সঠিক উত্তর আমি কার নিকট হতে পাব? প্রথম আমিরুল মু'মেনীন হযরত সিদ্দীকে আকবর রাদি আল্লাহু আনহু-এর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, যদি আমি তোমাকেই এ দরবেশী খিরকা দান করি তাহলে তুমি এর হক কিভাবে আদায় করবে? হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদি আল্লাহু আনহু জওয়াব দিলেন, বিশ্বস্ততা অবলম্বন করবো, মওলার বন্দেগীতে কছুর (ত্রুটি) করবো না এবং যে সব মাল আমার নিকট আছে এবং ভবিষ্যতে যা আসবে তার সমস্ত কিছুই আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিব।
এরপর হযরত ওমর রাদি আল্লাহু আনহু-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে ওমর এ খিরকা যদি তোমাকে দেয়া হয় তাহলে তুমি এর হক কিভাবে আদায় করবে? আমিরুল মো'মেনীন হযরত ওমর ফারুক রাদি আল্লাহু আনহু বললেন, আপিন যদি আমাকে এ দরবেশী খিরকা দান করেন তাহলে বিশ্বস্ততা অবলম্বন করবো; আল্লাহর বান্দাদের প্রতি ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবো এবং অত্যাচারীদের প্রতিশোধ নিব।
তারপর হযরত ওসমান গণী রাদি আল্লাহু আনহু-কে লক্ষ্য করে বললেন, যদি তোমাকে এ দরবেশী খিরকা প্রদান করা হয় তাহলে তুমি এর হক কিভাবে আদায় করবে? উত্তরে তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) এ খিরকা যদি আপনি আমাকে দান করেন তাহলে আমি উদারতা, বদান্যতা ও বিনয়াবনতা অবলম্বন করবো অর্থাৎ এ খিরকার যে হক আছে তা পরিপূর্ণরূপে আদায় করবো।
সর্বশেষে আমিরুল মো'মেনীন হযরত আলী কারামাল্লাহু ওয়াজহু-এর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, যদি এ দরবেশি খিরকা তোমাকে দেয়া হয় তাহলে তুমি এর হক কিভাবে আদায় করবে? উত্তরে হযরত আলী রাদি আল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া সরদারে দু' আলম, যদি আমাকে এ খিরকা দান করেন তাহলে আমি আল্লাহ তায়ালার প্রকৃত বান্দাদের ও এ খিরকার গোপনীয়তা রক্ষা করবো। হযরত রাসূলে মাকবুল (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ জবাবই প্রকৃত জবাব যা হযরত আলী প্রদান করেছে। অতএব এ দরবেশী খিরকা তাকেই দেয়া হলো। বলতে বলতে হযরত শায়খুল ইসলাম শায়খ ফরিদউদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চোখ অশ্রুতে ভরে উঠলো এবং হায় হায় করে কেঁদে উঠলেন ও জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। জ্ঞান ফিরে এলে পুনরায় বলতে লাগলেন, দরবেশী হলো গোপনীয়তা।
দরবেশের শর্ত—
দরবেশের উচিত এ চারটি কথা স্মরণ রাখা। যদি এ চার জিনিস তার মাঝে না দেখা যায় তা হলে তাকে দরবেশ বলা চলবেনা।
(১) আল্লাহর বান্দাদের দোষ-ত্রুটি হতে নিজের চোখকে বন্ধ করে রাখা।
(২) অকথ্য কথা শ্রবণ করা হতে নিজের কানকে বধির করে রাখা।
(৩) আয়াশ আরামের আলোচনা হতে নিজের জিহ্বাকে বোবা করে রাখা।
(৪) নফসের খায়েসে যদি পা কোন নাজায়েজ বা কোন অপ্রয়োজনে কোথাও যেতে চায় তাহলে তাকে ল্যাংড়া করে রাখা।
যখন এ চার জিনিস তার হাসেল হবে তখন তাকে দরবেশ বলবে, তা না হলে সে মিথ্যা দরবেশীর দাবীদার।
এরপর বললেন, শায়খ শিহাবউদ্দিন ওমর সোহ্রাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৪০ বছর চোখে পর্দা (পট্টী) বেঁধে রেখেছিলেন। কোন একজন এর কারণ 'জজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, পট্টী এ জন্য বেধেছি যে মানুষের দোষ ত্রুটি যেন চোখে না পড়ে। তোমরা কেউ যদি এ রকম কিছু দেখো তা হলে উচিত হবে তা কারও কাছে প্রকাশ না করা।
এরপর হযরত শায়খুল ইসলাম মোরাকাবায় বসলেন। অনেকক্ষণ পর্যন্ত মোরাকাবায় অতিবাহিত করার পর মাথা উত্তোলন করে আমার দিকে তাকালেন এবং বললেন, দরবেশদের এমন হওয়া উচিত নয় যে, যেভাবে তার ইচ্ছা হবে সেভাবেই চলবে। যখন শায়খুল ইসলাম আলোচনায় ব্যস্ত তখন মুহাম্মদ শাহ নামে তাঁর এক পীর ভাই খেদমতে উপস্থিত হলেন। তিনি তাকে বসার নির্দেশ দিলেন। নির্দেশানুযায়ী সে বসে পড়লো। কিন্তু তার চেহারায় একটা বিশাদের ছাপ লেগেছিলো। কারণ তার ভাই মৃত্যু পথের যাত্রী ছিলো। হযরত শায়খুল ইসলাম তাঁর আলোকিত অন্তর দ্বারা পীর ভাইয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন, "এখন অবস্থা কেমন?" তার উত্তরের অপেক্ষা না করে তিনি বললেন, "ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যাও তোমার ভাই সুস্থ হয়ে গেছে।” মুহাম্মদ শাহ আদবের সঙ্গে উঠে আদব সহকারে বিদায় নিয়ে নিজের বাড়ীর দিকে রওনা হলো। যখন বাড়ীতে পৌঁছলো তখন দেখলো যে তার ভাইয়ের অসুস্থতা দূর হচ্ছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলো। তার শরীরে তখন আর অসুস্থতার কোন চিহ্নমাত্র অবশিষ্ট নেই।
এরপর হযরত শায়খুল ইসলাম এরশাদ করলেন যে হযরত আলী কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু খুতবার মাঝে প্রায়ই পাঠ করতেন, 'আমি হযরত রাসুলে মাকবুল (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম)-কে জীবনেও দেখিনি যে তাঁর নিকট কোন নজর হাদিয়া পৌঁছলে তা তিনি সকাল হতে সন্ধ্যার মধ্যে বিলিয়া না দিতেন। অর্থাৎ সন্ধ্যার সময় তাঁর নিকট কোন নজর হাদীয়ার জিনিস অবশিষ্ট থাকতো না।
অপব্যায়—
এ আলোচনার সময় মাওলানা বদরুদ্দিন ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি আরজ করলেন যে,
ইস্রাফ অর্থাৎ (ব্যয়বহুলতা, অপচয়, অপব্যয়) কি এবং এর মাত্রা ও সীমা কতদূর পর্যন্ত? উত্তরে তিনি বললেন, যে খরচ আল্লাহর ওয়াস্তে ধর্মের নিয়তে জনকল্যাণে নয় সেটাই 'ইস্রাফ' বা অপব্যয় এবং যদি সমস্ত জগতের ঐশ্বর্যও আল্লাহর ওয়াস্তে বা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা হয় তবু সেটা অপব্যয় বা ইস্রাফ নয়। হযরত শায়খুল ইসলাম শায়খ ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকর্ রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন এ অমিয়বাণী বর্ণনা করছিলেন তখন যোহরের নামাজের আজান ভেসে এলো। তিনি মজলিস বরখাস্ত করে নামাজে নিমগ্ন হলেন। অন্যান্যরাও তাঁকে অনুসরণ করলেন। -আল্হামদু লিল্লাহি আলা জালিক।
(রাহাতুল ক্বুলুব)