২০- বিংশ মজলিস
মহব্বত
পঁচিশে রবিউল আউয়াল, বৃহস্পতিবার। আমরা অনেকেই হুজ্জাতুল ইসলামের দরবারে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বিশেষ কোন কারণে তখনও দরবারে উপস্থিত হইতে পারেন নাই। মহব্বত বা খোদা প্রেম সম্বন্ধে আমরা আলাপ-আলোচনা করিতেছিলাম। এমন সময় তিনি দরবারে উপস্থিত হইয়া সকলকে সালাম করিলেন। আমরা সকলেই সালামের উত্তর দিয়া চুপ করিয়া রহিলাম। তিনি সকলের দিকে চাহিয়া হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করিলেন, দরবেশগণ কি সম্বন্ধে আলাপ করিতেছিলেন? আমি বলিলাম, খোদা প্রেম সম্বন্ধে আলাপ-আলোচনা হইতেছিল।
তিনি এরশাদ করিলেন, ভাইসব! খোদা প্রেম বা মহব্বতের সাতটি সোপান বা স্তর রহিয়াছে। ইহার সর্বপ্রথম স্তর হইল বিপদে ধৈর্যাবলম্বন করা। অর্থাৎ বন্ধুর পক্ষ হইতে যে বিপদ অবতীর্ণ হয় তাহা প্রশান্ত চিত্তে বরণ করিয়া ধৈর্যাবলম্বন করা।
হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করিয়াছেন, মহব্বত এমনই একটি স্তর যেখানে শুধু ঐ সমস্ত প্রেমিকই পদ স্থাপন করিতে পারেন যাহারা বন্ধুর মহব্বত ব্যতীত আর কিছুই দেখিতে পান না। সাথে সাথে অন্যান্য যাবতীয় কিছু হইতে দূরে সরিয়া থাকেন।
একবার হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) প্রেমের জগতে বন্ধুর দরবারে একাকী উপবিষ্ট ছিলেন। আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞাসা করিলেন, বায়েজীদ! বন্ধু বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করিতে আসিলে নিশ্চয়ই কিছু লইয়া আসে। তুমি আমার জন্য কি উপঢৌকন আনিয়াছ?
হযরত বায়েজীদ (রঃ) বিনীতভাবে আরয করিলেন, মহব্বত এবং আপনার সন্তুষ্টি। আপনার বন্ধুগণ বলেন, এই দুইটি বস্তুই নাকি আপনার পছন্দনীয়।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিলেন, উপঢৌকনস্বরূপ তুমি উপযুক্ত বস্তুই সাথে লইয়া আসিয়াছ, ইহা আমার খুবই পছন্দনীয়।
তিনি বলিলেন, যেব্যক্তি লোভ-লালসার মোহে পতিত হইয়া স্বীয় অন্তকরণকে নিষ্প্রভ করে, তাহাকে লানতের কাফন পরিধান করাইয়া লজ্জার যমীনে সমাধিস্থ করা হয়। খোদা প্রেমিক একমাত্র খোদা ব্যতীত অন্য আর কোন কিছুতেই শান্তি পাইতে পারেন না। খোদা প্রেমিক যতক্ষণ পর্যন্ত লোক সংস্রব পরিত্যাগ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রেমাস্পদের নৈকট্যলাভে সমর্থ হয় না। বন্ধুকে শত্রু, পরিবার-পরিজনকে ইয়াতীম মনে না করা পর্যন্ত বন্ধুর সান্নিধ্য লাভ হইতে বঞ্চিত থাকে।
তারপর তিনি এরশাদ করিলেন, খোদা প্রেম ও খোদা-ভীতি এই দুইটি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি ব্যতীত অন্যটি সাধন হয় না। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- "যাহার মধ্যে আল্লাহর ভয় নাই সে মুসলমান নহে। তাই যে খোদাভীরু সে-ই প্রকৃত মুসলমান।" যেব্যক্তি রোযা রাখার জন্য কম খায় নামায পড়ার জন্য কম কথা বলে এবং এবাদত করার জন্য কম ঘুমায়, সে-ই খোদাভীরু। এই তিনটি গুণ যাহার মধ্যে নাই, সে কখনও খোদাভীরু হইতে পারে না।
দরবেশের মধ্যে ইহা ব্যতীত আরও তিনটি গুণ বেশী থাকিতে হইবে।প্রথম- ভয়। অন্তরে ভয় থাকিলে পাপ হইতে বিরত থাকা যায় এবং দোযখের আগুন হইতে মুক্তি পায়। দ্বিতীয়- খোদার প্রতি সন্তুষ্টি। ইহা এবাদত-বন্দেগী করিতে লোককে উৎসাহ দান করে, আসক্তি জন্মায়। ফলে উচ্চ মর্যাদা এবং বেহেশত প্রাপ্ত হয়। তৃতীয়- মহব্বত। অর্থাৎ খারাপ কাজ পরিতাগ করা। ইহাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
খোদার ভয়ে এক যুবকের দেহ অস্থিসর্বস্ব হইয়া পড়িয়াছিল। যুবক এশার নামাযের পর গলায় রশি লাগাইয়া নিজেকে কড়ি কাঠের সাথে বাঁধিতেন এবং সারারাত দাঁড়াইয়া আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করিতেন আর বলিতেন, হে আমার আল্লাহ মহান ! কেয়ামতের দিন যখন আমার অগণিত পাপ লোকের সম্মুখে প্রকাশ করা হইবে তখন আমি কিভাবে মুখ দেখাইব? কিছুদিন পর তিনি অসুস্থ হইয়া পড়িলেন। তিনি বালিশের পরিবর্তে এক খণ্ড ইট মাথার নিচে দিয়া শুইয়া বৃদ্ধা মাতাকে ডাকিয়া বলিলেন, মা ! আমি মৃত্যুবরণ করিলে আমার গলায় রশি বাঁধিয়া বাড়ীর চারিদিকে ঘুরাইবেন এবং বলিবেন, এই ব্যক্তি তাহার মহান প্রভু হইতে পালাইয়া ফিরিত, তাই সে এইরূপ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। দ্বিতীয়ত- আমার জানাযা রাতের অন্ধকারে বাহির করিবেন যেন লোকে না দেখে। কারণ, যে দেখিবে সে-ই আমার কথা স্মরণ করিয়া পরিতাপ করিবে। তৃতীয়ত- আমাকে দাফন করার পর আপনি আমার কবরের পাশে বসা থাকিবেন। হয়ত আপনার পদধূলির বরকতে আল্লাহ আমার শাস্তি কমাইয়া দিতে পারেন।
যুবকের মৃত্যুর পর মা তাহার গলায় রশি লাগাইতে উদ্যত হইতেই আওয়ায হইল, হে বৃদ্ধা ! আমার বন্ধু আমার সান্নিধ্যে পৌঁছিয়া গিয়াছে। আল্লাহর বন্ধুর সাথে কি কেহ এমন ব্যবহার করে? সে আমার বন্ধু, আমি তাহাকে ক্ষমা করিয়াছি।
একজন বুযুর্গ আল্লাহর ভয়ে এত ক্রন্দন করিতেন যে, চোখের পানি পড়িতে পড়িতে তাঁহার গালের চামড়া এবং গোশত উধাও হইয়া গিয়াছিল। লোকে বলে. তাঁহার গোশতবিহীন গালে টুনটুনি পাখি বাসা বাঁধিয়াছিল। অথচ তিনি আল্লাহর ভয়ে এত ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন যে, পাখির আসা যাওয়ার কোন খবরই রাখিতেন না। তিনি যখন কেয়ামত ও কবরের ভীষণ অবস্থার কথা শুনিতেন তখন ভয়ে মাছের ন্যায় ছটফট করিতেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাঁহার এই অবস্থা ছিল
অতঃপর পীর ও মুরশিদ তাওয়াক্কোল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা সম্বন্ধে এরশাদ করিলেন, জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ যেকোন অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করিয়া থাকেন। অন্যের প্রতি তাহাদের কোন ভরসা থাকে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
এবং তাঁহারই উপর মোমেনদের ভরসা কর। উচিত।
একবার হযরত রাবেয়া বসরী হজ্জ করার উদ্দেশে একটি গাধায় আরোহণ করিয়া মক্কার পথে রওয়ানা হন। এক নির্জন মরুভূমিতে পৌছার পর তাঁহার একমাত্র বাহন গাধাটি মারা যায়। ফলে তাঁহার আসবাবপত্র এদিক-সেদিক ছড়াইয়া পড়িয়া থাকে। সে পথে এক কাফেলা মক্কায় হজ্জ করিতে যাইতেছিল। তাহারা হযরত রাবেয়াকে চিনিতে পারিল এবং তাঁহার অসহায় অবস্থা দেখিয়া কিছুসংখ্যক লোক আসিয়া বিনীভাবে বলিল, আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আমরা আপনার আসবাবপত্র আমাদের বাহনে উঠাইয়া লই এবং আপনিও আমাদের সাথে চলুন।
হযরত রাবেয়া গর্জিয়া বলিলেন, আমি তোমাদের উপর ভরসা করিয়া বাড়ী হইতে বাহির হই নাই। আমি যাঁহার উপর ভরসা করিয়া গৃহত্যাগ করিয়াছি তিনি আমাকে সেখানে পৌছার ব্যবস্থা করিয়া দিবেন। কাফেলা চলিয়া গেল। হযরত রাবেয়া তখন আকাশের দিকে মুখ তুলিয়া বলিলেন, হে আল্লাহ! আমি কি লোকের উপর ভরসা করিয়া বাড়ী হইতে বাহির হইয়াছিলাম যে, তুমি আমার সাহায্যার্থ লোক পাঠাইয়াছ? তুমিই তো আমার একমাত্র ভরসার পাত্র। সুতরাং জনমানবহীন এই মরুভূমিতে তুমি কেন আমাকে এই বিপদে ফেলিলে? তাঁহার মুখের কথা শেষ না হইতেই মৃত গাধাটি গা ঝাড়া দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। হযরত রাবেয়া গাধার পিঠে মালপত্র উঠাইয়া রওয়ানা হইলেন।
যোহরের আযান হইল। সকলে উঠিয়া মসজিদে রওয়ানা হইলাম।
পঁচিশে রবিউল আউয়াল, বৃহস্পতিবার। আমরা অনেকেই হুজ্জাতুল ইসলামের দরবারে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বিশেষ কোন কারণে তখনও দরবারে উপস্থিত হইতে পারেন নাই। মহব্বত বা খোদা প্রেম সম্বন্ধে আমরা আলাপ-আলোচনা করিতেছিলাম। এমন সময় তিনি দরবারে উপস্থিত হইয়া সকলকে সালাম করিলেন। আমরা সকলেই সালামের উত্তর দিয়া চুপ করিয়া রহিলাম। তিনি সকলের দিকে চাহিয়া হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করিলেন, দরবেশগণ কি সম্বন্ধে আলাপ করিতেছিলেন? আমি বলিলাম, খোদা প্রেম সম্বন্ধে আলাপ-আলোচনা হইতেছিল।
তিনি এরশাদ করিলেন, ভাইসব! খোদা প্রেম বা মহব্বতের সাতটি সোপান বা স্তর রহিয়াছে। ইহার সর্বপ্রথম স্তর হইল বিপদে ধৈর্যাবলম্বন করা। অর্থাৎ বন্ধুর পক্ষ হইতে যে বিপদ অবতীর্ণ হয় তাহা প্রশান্ত চিত্তে বরণ করিয়া ধৈর্যাবলম্বন করা।
হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করিয়াছেন, মহব্বত এমনই একটি স্তর যেখানে শুধু ঐ সমস্ত প্রেমিকই পদ স্থাপন করিতে পারেন যাহারা বন্ধুর মহব্বত ব্যতীত আর কিছুই দেখিতে পান না। সাথে সাথে অন্যান্য যাবতীয় কিছু হইতে দূরে সরিয়া থাকেন।
একবার হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) প্রেমের জগতে বন্ধুর দরবারে একাকী উপবিষ্ট ছিলেন। আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞাসা করিলেন, বায়েজীদ! বন্ধু বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করিতে আসিলে নিশ্চয়ই কিছু লইয়া আসে। তুমি আমার জন্য কি উপঢৌকন আনিয়াছ?
হযরত বায়েজীদ (রঃ) বিনীতভাবে আরয করিলেন, মহব্বত এবং আপনার সন্তুষ্টি। আপনার বন্ধুগণ বলেন, এই দুইটি বস্তুই নাকি আপনার পছন্দনীয়।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিলেন, উপঢৌকনস্বরূপ তুমি উপযুক্ত বস্তুই সাথে লইয়া আসিয়াছ, ইহা আমার খুবই পছন্দনীয়।
একবার হযরত রাবেয়া বসরী আল্লাহর দরবারে বার বার সেজদা করিতেছিলেন আর বলিতেছিলেন, হে মাবুদ ! আমি যদি দোযখের ভয়ে আপনার এবাদত-বন্দেগী করি তবে আমাকে দোযখের অতল তলে নিক্ষেপ করিয়েন। আর যদি বেহেশতের লোভে আপনার অরাধনা-উপাসনা করি তবে বেহেশত আমার জন্য হারাম করিয়া আমাকে দোযখের ইন্ধন করিয়েন। আর যদি আপনার মহব্বতে আপনার জন্যই এবাদত করি তবে পরকালে আপনার দর্শন লাভ হইতে আমাকে বঞ্চিত করিয়েন না।
তিনি বলিলেন, যেব্যক্তি লোভ-লালসার মোহে পতিত হইয়া স্বীয় অন্তকরণকে নিষ্প্রভ করে, তাহাকে লানতের কাফন পরিধান করাইয়া লজ্জার যমীনে সমাধিস্থ করা হয়। খোদা প্রেমিক একমাত্র খোদা ব্যতীত অন্য আর কোন কিছুতেই শান্তি পাইতে পারেন না। খোদা প্রেমিক যতক্ষণ পর্যন্ত লোক সংস্রব পরিত্যাগ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রেমাস্পদের নৈকট্যলাভে সমর্থ হয় না। বন্ধুকে শত্রু, পরিবার-পরিজনকে ইয়াতীম মনে না করা পর্যন্ত বন্ধুর সান্নিধ্য লাভ হইতে বঞ্চিত থাকে।
তারপর তিনি এরশাদ করিলেন, খোদা প্রেম ও খোদা-ভীতি এই দুইটি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি ব্যতীত অন্যটি সাধন হয় না। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- "যাহার মধ্যে আল্লাহর ভয় নাই সে মুসলমান নহে। তাই যে খোদাভীরু সে-ই প্রকৃত মুসলমান।" যেব্যক্তি রোযা রাখার জন্য কম খায় নামায পড়ার জন্য কম কথা বলে এবং এবাদত করার জন্য কম ঘুমায়, সে-ই খোদাভীরু। এই তিনটি গুণ যাহার মধ্যে নাই, সে কখনও খোদাভীরু হইতে পারে না।
দরবেশের মধ্যে ইহা ব্যতীত আরও তিনটি গুণ বেশী থাকিতে হইবে।প্রথম- ভয়। অন্তরে ভয় থাকিলে পাপ হইতে বিরত থাকা যায় এবং দোযখের আগুন হইতে মুক্তি পায়। দ্বিতীয়- খোদার প্রতি সন্তুষ্টি। ইহা এবাদত-বন্দেগী করিতে লোককে উৎসাহ দান করে, আসক্তি জন্মায়। ফলে উচ্চ মর্যাদা এবং বেহেশত প্রাপ্ত হয়। তৃতীয়- মহব্বত। অর্থাৎ খারাপ কাজ পরিতাগ করা। ইহাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
খোদার ভয়ে এক যুবকের দেহ অস্থিসর্বস্ব হইয়া পড়িয়াছিল। যুবক এশার নামাযের পর গলায় রশি লাগাইয়া নিজেকে কড়ি কাঠের সাথে বাঁধিতেন এবং সারারাত দাঁড়াইয়া আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করিতেন আর বলিতেন, হে আমার আল্লাহ মহান ! কেয়ামতের দিন যখন আমার অগণিত পাপ লোকের সম্মুখে প্রকাশ করা হইবে তখন আমি কিভাবে মুখ দেখাইব? কিছুদিন পর তিনি অসুস্থ হইয়া পড়িলেন। তিনি বালিশের পরিবর্তে এক খণ্ড ইট মাথার নিচে দিয়া শুইয়া বৃদ্ধা মাতাকে ডাকিয়া বলিলেন, মা ! আমি মৃত্যুবরণ করিলে আমার গলায় রশি বাঁধিয়া বাড়ীর চারিদিকে ঘুরাইবেন এবং বলিবেন, এই ব্যক্তি তাহার মহান প্রভু হইতে পালাইয়া ফিরিত, তাই সে এইরূপ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। দ্বিতীয়ত- আমার জানাযা রাতের অন্ধকারে বাহির করিবেন যেন লোকে না দেখে। কারণ, যে দেখিবে সে-ই আমার কথা স্মরণ করিয়া পরিতাপ করিবে। তৃতীয়ত- আমাকে দাফন করার পর আপনি আমার কবরের পাশে বসা থাকিবেন। হয়ত আপনার পদধূলির বরকতে আল্লাহ আমার শাস্তি কমাইয়া দিতে পারেন।
যুবকের মৃত্যুর পর মা তাহার গলায় রশি লাগাইতে উদ্যত হইতেই আওয়ায হইল, হে বৃদ্ধা ! আমার বন্ধু আমার সান্নিধ্যে পৌঁছিয়া গিয়াছে। আল্লাহর বন্ধুর সাথে কি কেহ এমন ব্যবহার করে? সে আমার বন্ধু, আমি তাহাকে ক্ষমা করিয়াছি।
একজন বুযুর্গ আল্লাহর ভয়ে এত ক্রন্দন করিতেন যে, চোখের পানি পড়িতে পড়িতে তাঁহার গালের চামড়া এবং গোশত উধাও হইয়া গিয়াছিল। লোকে বলে. তাঁহার গোশতবিহীন গালে টুনটুনি পাখি বাসা বাঁধিয়াছিল। অথচ তিনি আল্লাহর ভয়ে এত ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন যে, পাখির আসা যাওয়ার কোন খবরই রাখিতেন না। তিনি যখন কেয়ামত ও কবরের ভীষণ অবস্থার কথা শুনিতেন তখন ভয়ে মাছের ন্যায় ছটফট করিতেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাঁহার এই অবস্থা ছিল
অতঃপর পীর ও মুরশিদ তাওয়াক্কোল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা সম্বন্ধে এরশাদ করিলেন, জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ যেকোন অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করিয়া থাকেন। অন্যের প্রতি তাহাদের কোন ভরসা থাকে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
এবং তাঁহারই উপর মোমেনদের ভরসা কর। উচিত।
একবার হযরত রাবেয়া বসরী হজ্জ করার উদ্দেশে একটি গাধায় আরোহণ করিয়া মক্কার পথে রওয়ানা হন। এক নির্জন মরুভূমিতে পৌছার পর তাঁহার একমাত্র বাহন গাধাটি মারা যায়। ফলে তাঁহার আসবাবপত্র এদিক-সেদিক ছড়াইয়া পড়িয়া থাকে। সে পথে এক কাফেলা মক্কায় হজ্জ করিতে যাইতেছিল। তাহারা হযরত রাবেয়াকে চিনিতে পারিল এবং তাঁহার অসহায় অবস্থা দেখিয়া কিছুসংখ্যক লোক আসিয়া বিনীভাবে বলিল, আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আমরা আপনার আসবাবপত্র আমাদের বাহনে উঠাইয়া লই এবং আপনিও আমাদের সাথে চলুন।
হযরত রাবেয়া গর্জিয়া বলিলেন, আমি তোমাদের উপর ভরসা করিয়া বাড়ী হইতে বাহির হই নাই। আমি যাঁহার উপর ভরসা করিয়া গৃহত্যাগ করিয়াছি তিনি আমাকে সেখানে পৌছার ব্যবস্থা করিয়া দিবেন। কাফেলা চলিয়া গেল। হযরত রাবেয়া তখন আকাশের দিকে মুখ তুলিয়া বলিলেন, হে আল্লাহ! আমি কি লোকের উপর ভরসা করিয়া বাড়ী হইতে বাহির হইয়াছিলাম যে, তুমি আমার সাহায্যার্থ লোক পাঠাইয়াছ? তুমিই তো আমার একমাত্র ভরসার পাত্র। সুতরাং জনমানবহীন এই মরুভূমিতে তুমি কেন আমাকে এই বিপদে ফেলিলে? তাঁহার মুখের কথা শেষ না হইতেই মৃত গাধাটি গা ঝাড়া দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। হযরত রাবেয়া গাধার পিঠে মালপত্র উঠাইয়া রওয়ানা হইলেন।
যোহরের আযান হইল। সকলে উঠিয়া মসজিদে রওয়ানা হইলাম।
No comments:
Post a Comment