ইশক
‘মহব্বত' বলতে কোন সুন্দর ও মনোরম বস্তুর প্রতি অন্তরে আগ্রহ ও আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়াকে বুঝায। এই আগ্রহ ও আকর্ষণই যখন অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে তীব্রতর রূপ ধারণ করে, তখন তার নাম হয় ‘ইশক’। এই ইশকের ক্ষেত্রে সর্বশেষ পর্যায়ে আশেক বা প্রেমিক ব্যক্তি প্রেমাস্পদের জন্য নিবেদিত প্রাণ দাসানুদাসে পরিণত হয়। স্বীয় প্রেমাস্পদের খাতিরে নিজের ধন-দৌলত, মান-সম্মান সব অকাতরে বিসর্জন দেয়।
প্রেমিকা যুলায়খা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ইশকে উন্মত্ত হয়ে স্বীয় রূপ-গুণ ও ধন-সম্পদ সবকিছু বিলীন করে দিয়েছিলেন। সত্তরটি উটের বোঝা পরিমাণ তার স্বর্ণ-রৌপ্যের অলংকার ছিল; এসবকিছুকে তিনি একমাত্র হযরত ইউসুফের জন্য উৎসর্গ করে দেন। যে কেউ তার কাছে এসে যদি শুধু এতটুকু বলতো যে, আমি তোমার ইউসুফকে দেখেছি, তা হলে বলার সাথে সাথে তাকে একটি অমূল্য স্বর্ণের মালা উপহার দিয়ে জীবনের তরে ধনবান করে দিতেন। অবশেষে তিনি নিজে সম্পূর্ণ রিক্ত হস্ত দরিদ্রে পরিণত হয়েছিলেন। তার এ অবস্থাকে কেন্দ্র করে লোকমুখে প্রবাদ প্রচলিত ছিল — 'ইউসুফের নামে সর্বস্ব'। ইশক ও মহব্বতের আতিশয্যে তিনি সবকিছু থেকে উদাসীন ও বিস্মৃত হয়ে যেদিকে তাকাতেন, সেদিকেই কেবল ইউসুফ আর ইউসুফই দেখতে পেতেন; এমনকি আসমানের তারকারাজিতেও তিনি ইউসুফের নাম লেখা দেখতেন।
বর্ণিত আছে — এই যুলায়খা যখন ইসলামে দীক্ষা গ্রহণ করেন তথা ঈমানী নুর লাভে ধন্য হন, অতঃপর হযরত ইউসুফের (আঃ) সাথে প্রণয়সূত্রে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ তখন তিনি তার থেকে পৃথক হয়ে নিরব একাকীত্বে এমনভাবে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়ে যান যে, শুধুমাত্র এই ইবাদতের জন্য তিনি সর্বপ্রকার জাগতিক সম্পর্ক থেকে সম্পূর্ণরূপে নির্লিপ্ত হয়ে থাকেন। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম যখন পেয়ার-সোহাগের জন্য দিনের বেলায় তাঁকে আহবান করতেন, তখন তিনি রাতের ওয়াদা করে মুলতবী করতেন। আবার যখন রাতে আমন্ত্রণ জানাতেন, তখন দিবসের কথা বলে নিস্কৃতি চাইতেন। একদা হযরত ইউসুফকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন : 'হে ইউসুফ ! আল্লাহর পরিচয় লাভ করার পূর্বে আমি তোমাকে ভালবাসতাম; এখন আমি আল্লাহর পরিচয় পেয়ে গেছি; তাই একমাত্র তার মহব্বত ও ভালবাসা ছাড়া আমার অন্তর থেকে সকল গায়রুল্লাহর মহব্বত দূর হয়ে গেছে এবং এজন্যে আমি কোন বিনিময়ও কামনা করি না।'
হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম বললেন : “হে যুলায়খা ! আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে হুকুম করেছেন। এবং বলেছেন যে, তোমার গর্ভ থেকে দুটি পুত্রসন্তান জন্ম নিবে এবং তাদেরকে নুবুওয়াত প্রদান করা হবে।
যুলায়খা বললেন : “যেহেতু আল্লাহ্ তা'আলা আপনাকে হুকুম করেছেন এবং এজন্যে আমাকে উপায় ও ওসীলা হিসাবে নির্ধারণ করেছেন, তাই এ হুকুম আমার জন্য শিরধার্য। অতঃপর তিনি মিলনে সম্মত হন।
পরবর্তী পর্ব
No comments:
Post a Comment