সবেবরাত (22) 📚মাজালিশে গাজ্জালী ✍🏻ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)



📚মাজালিশে গাজ্জালী ✍🏻ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
২২-দ্বাবিংশ মজলিস

শবে বরাত
সাতাইশে রবিউল আউয়াল, শনিবার আমরা দরবারে উপস্থিত ছিলাম। সৈয়দ খালছার পুত্র বলিলেন, 'রওযাতুল ইসলাম' কিতাবে লিখিত আছে, যে মুসলিম রমণী কপালে সিঁদুর লাগায় সে কাফের। বহু মহিলা এই কাজ করিয়া থাকে; তাহাদের উপায় কি?
হযরত পীর ও মুরশিদ বলিলেন, কাফেরদের মহিলারা কপালে সিঁদুর লাগায়। এখন দেখিতে হইবে, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য না ধর্মীয় নীতি পালনার্থ এই সিঁদুর লাগায়। যদি সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য লাগায় তবে কুফরী নহে। আর যদি তাহাদের ধর্মের অঙ্গ হিসাবে লাগায় এবং মুসলমান মহিলারাও লাগায় তবে ইহা কুফরী হইবে। কারণ, কাফেরদের অনুসরণ করাই কুফরী।
হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করিয়াছেন- "যে যে সম্প্রদায়ের অনুসরণ করে সে উক্ত সম্প্রদায়ভুক্ত"।
যদি কপালে সিঁদুর লাগানো কুফরী হইত তবে 'কানযুল মাসায়েল' গ্রন্থের গ্রন্থকার অবশ্যই তাহা প্রকাশ করিতেন। এই সময় আশরাফুদ্দীন রোকন বলিলেন, ইহার পূর্বেও বহু আলেম এই মাসআলা সম্বন্ধে বহু ঘাঁটাঘাঁটি করিয়াছেন। কিন্তু কোথাও কিছু পাওয়া যায় নাই। কপালে সিঁদুর লাগানো যদি কাফেরদের ধর্মীয় অনুশাসন হইত তবে অবশ্যই পাওয়া যাইত এবং আলেমগণও প্রচার করিতেন।
ইহার পর মাখদুম জাহা বলিলেন, কপালে সিঁদুর লাগানো দ্বারা কাফেরদের অনুসরণ করা হয় না। কারণ, আমরা এমন বহু কাজ করিয়া থাকি যাহা কাফেরও করিয়া থাকে। যেমন- কাফের পানাহার করে আমরাও করি, তাহারা কথাবার্তা বলে আমরাও বলি, তাহারা কাপড় পরিধান করে আমরাও করি।
এরূপ আরও অনেক কাজই আমরা করিয়া থাকি, তাহাতে কুফরী হয় না। তাই সিঁদুর লাগানোও এই জাতীয় কাজ। যাহা তাহাদের ধর্মীয় নীতি তাহাতে যদি আমরা তাহাদের অনুসরণ করি তবে কুফরী হইবে।

এক বন্ধু আরয করিলেন, হিন্দু সম্প্রদায় যে প্রতি বৎসর এক নির্দিষ্ট সময়ে আবীর খেলে অর্থাৎ একে অন্যকে রং ছিটায়, আমাদের মধ্যে যদি কেহ তাহা করে তবে তাহার হুকুম কি হইবে।
এরশাদ করিলেন, ইহা কুফরী। কারণ, তাহারা পরস্পর যে রং ছিটায় ইহা তাহাদের ধর্মীয় কাজ এবং ধর্মের অনুশাসন। আমাদের মধ্যে যে কেহ তাহা করিবে তাহাদের অনুসরণেই করা হইবে। আর যে ধর্মীয় বিষয়ে তাহাদের অনুসরণ করিবে সে কাফের। অধিকন্তু কোন মুসলমান যদি তাহার উপর রং ছিটাইবার অনুমতি দেয় তবে সে কাফের হইবে। হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন 
কুফরী কাজে রাযী থাকিলে কাফের হইবে।

এক বন্ধু জিজ্ঞাসা করিলেন, শবে বরাতকে কেন শবে বরাত বলা হয়?
এরশাদ করিলেন, বহু লোক বহু প্রকারে শবে বরাতের অর্থ করিয়াছেন। কেহ বলেন, এই রাতে আল্লাহ তাআলা পুণ্যশীলদিগকে দোযখ হইতে মুক্তি দান করেন এবং দুর্ভাগা পাপীদিগকে বেহেশত হইতে বঞ্চিত করেন। কারণ, পুণ্যবানদের দোযখের সাথে কোন সম্পর্ক নাই।

এক বুযুর্গ বলেন- এই রাতে বাদশাহ যখন রাজস্ব আদায় করেন তখন তিনি বরাত দান করেন। এই শবে বরাতে যখন তিনি তাঁহার বান্দাদিগকে দান করেন তখন দুই প্রকার বরাত দান করেন। মোমেনদিগকে আযাব হইতে বরাত দেন এবং যালেম ও কাফেরদিগকে রহমত ও পুণ্য হইতে বঞ্চিত করেন।

আবার কেহ বলেন, এই রাতে লওহে মাহফুয হইতে ফেরেশতাদের কর্ম- তালিকা আনিয়া তাহাদের নিকট দেওয়া হয়। তাহারা সেই তালিকা মোতাবেক আল্লাহর আদেশ-নিষেধ কার্যকর করিয়া থাকেন। আবার শবে বরাতকে ভাগ্য বণ্টনের রাতও বলা হয়।

বর্ণিত আছে, এই রাতে হযরত জিবরাঈল (আঃ) হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আগমন করিয়া আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক এই রাতের ফযীলত বর্ণনা করেন। তিনি বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এই রাতে আল্লাহ তাআলা তিন হাজার রহমতের দ্বার খুলিয়া দেন। এই রাতে যেব্যক্তি সোবহে সাদেক পর্যন্ত এবাদত-বন্দেগী করে, মেহেরবান আল্লাহ তাহাকে তাঁহার রহমতের জন্য নির্দিষ্ট করিয়া নিরাপদ করিয়া রাখেন। 
শবে বরাতের ফযীলতের বিষয় হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) জিবরাঈল (আঃ)-এর নিকট শুনিয়া জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানে গমন করেন এবং সারারাত জাগ্রত থাকেন। অতঃপর তাঁহার উম্মতদিগকে বলেন, এই রাতে তোমরা জাগ্রত থাকিয়া আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করিবে যেন আল্লাহর রহমত হইতে বঞ্চিত না হও।

মাওলানা মোয়াইয়েদ আরেফ নামক একজন মুরীদ বলিলেন, আমি আজ রাতে খানকা শরীফে কিছু ওয়ায-নসীহত করার অনুমতি প্রার্থনা করিতেছি। পীর ও মুরশিদ অনুমতি দান করিলে এশার নামাযের পর পীর ও মুরশিদের উপস্থিতিতে তিনি ওয়ায করেন। ওয়ায শেষে অন্যান্য ভক্তদের সাথে জামাআতে দুই দুই রাকআত করিয়া একশত রাকআত নামায আদায় করেন। প্রত্যেক রাকআতে ফাতেহার পর দশবার কুলহু আল্লাহু পাঠ করেন। ইহার পর তিনি যে কবরস্থানে তাঁহার মা শায়িতা ছিলেন সেখানে গমন করেন এবং মায়ের কবর যিয়ারত করেন। পরে অন্যান্য বন্ধুদের কবর যিয়ারত করার পর বাড়ী ফিরিয়া আসেন।
সকল লোক চলিয়া গেলে আমাকে ডাকিয়া পাঠান। আমি খেদমতে উপস্থিত হইলে তাঁহার মাথার পাগড়ী উঠাইয়া আমার মাথায় পরাইয়া দিলেন। ইহা ছাড়াও অনেক কিছু আমাকে দান করিলেন। 
-----------

No comments:

__