📚মাজালিসে গাযযালী ✍🏻ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
১৯- ঊনবিংশ মজলিস
দোযখের উত্তাপ
চব্বিশে রবিউল আউয়াল, বুধবার। দোযখ, শীত ও গরম বাতাসের কথা বলা হইতেছিল। হযরত পীর ও মুরশিদ বলিলেন, দোযখের দুইটি শ্বাসের দরুন এই উত্তাপ। আল্লাহই জানেন দোযখের গরম কত ভয়াবহ।
কোন কোন কিতাবে বর্ণিত আছে, দোযখের আগুন আল্লাহর নিকট ক্রন্দন করিয়া ফরিয়াদ করিল, হে প্রভু! আমার একাংশ অন্যাংশকে খাইয়া ফেলিল। ইহার পর উহার জন্য বৎসরে দুইটি শ্বাস ছাড়িবার ব্যবস্থা করিলেন। এক শ্বাস গরমের সময় অন্য শ্বাস শীতের সময়। উহার গরমের শ্বাস হইতেই আমরা গরম এবং শীতের শ্বাস হইতে শীত অনুভব করিয়া থাকি।
যদিও বাতাস তিন প্রকার। কিন্তু বর্ষা কৃত্রিম। বৃষ্টি হইলেই বর্ষা হয়। বৃষ্টি না হইলে গরম থাকে। সুতরাং শীত ও গরমই মওসুম। দুর্বলচেতা মানুষ দোযখের একটি শ্বাস সহ্য করিতেই অক্ষম। দোযখের সম্পূর্ণ আযাব কিভাবে সহ্য করিবে? দোযখের আযাব ভয়ঙ্কর কঠিন। মানুষ যতই এবাদত-বন্দেগী করুক না কেন, উহার ফলস্বরূপ সে কখনও দোযখের শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে না। কিন্তু আল্লাহ অসীম দয়ালু, এই যা আশা-ভরসা। তোমার মেহেরবানী যদি আমার জন্য কার্যকর হয় তবেই আমি মুক্ত। আর যদি আযাব প্রদান কর তবে লজ্জার আর সীমা থাকিবে না। দোযখ সম্বন্ধে আল্লাহর রাসূল (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করিয়াছেন-
"দোযখে সত্তর হাজার ময়দান। প্রতি ময়দানে সত্তর হাজার গহ্বর, প্রতি গহ্বরে সত্তর হাজার সাপ এবং সত্তর হাজার বিচ্ছু। ইহার প্রতিটি স্থানে শাস্তি পাওয়া ব্যতীত কাফের ও মোনাফেকদের গত্যন্তর নাই।"
দোযখের সর্বনিম্ন আযাব হইল, পাপীর পায়ে এক জোড়া আগুনের জুতা পরিধান করাইয়া দেওয়া হইবে। উহার উত্তাপেই মাথার মগজ টগবগ করিতে থাকিবে। হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করিয়াছেন-
দোযখের নিম্নতম আযাব হইবে এক জোড়া অগ্নি পাদুকা পরাইয়া দেওয়া। যাহার উত্তাপে মাথার মগজ টগবগ করিয়া ফুটিতে থাকিবে। ইহা দ্বারা অনুমান কর যে, ভীষণতর আযাবের রূপ কেমন হইবে? দোযখের আযাব সম্বন্ধে যদি তোমার কোন প্রকার ভ্রান্ত ধারণা থাকে তবে তোমার একটি আঙ্গুল আগুনের মধ্যে রাখিয়া উহাকেই দোযখের আগুন মনে কর। পরকালের আগুনের সম্মুখে দুনিয়ার আগুনের কোন অস্তিত্বই নাই। কারণ, দুনিয়ার আগুনকে রহমত দ্বারা সত্তরবার ধৌত করা হইয়াছে। হুযুর (সল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করিয়াছেন- "পৃথিবীর আগুনকে রহমতের পানি দ্বারা সত্তর বার ধৌত করা হইয়াছে"।
হযরত ঈসা (আঃ) বলিয়াছেন, কেয়ামতের দিন বহু সুস্থ-সবল, সুন্দর এবং মিষ্টভাষী লোক অগ্নির উত্তাপে ক্রন্দন করিতে থাকিবে।
হযরত দাউদ (আঃ) বলিতেন, প্রভু ! সূর্য তাপই তো সহ্য করিতে পারি না, দোযখের গরম কিভাবে সহ্য করিব। তোমার রহমতের আওয়ায সহ্য করার ক্ষমতা নাই। অতএব আযাবের আওয়ায কিভাবে সহ্য করিব?
বিশ্বাস কর, আল্লাহ তাআলা অগ্নিকে খুবই ভয়াবহ করিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন। তোমার এবং আমার অক্ষমতার জন্য খুবই দুঃখ। জানি না আমাদের ভাগ্যে কি আছে? আমার এই চিন্তা-ভাবনায় সীমাহীন গভীর পেরেশানী দিন-রাত আমার উপর বিস্তার করিয়া আছে। হায় ! আমার পরিণতি কি হইবে? এই সমস্ত আযাব হইতে যদি রক্ষা পাইতে চাও তবে নেক আমল কর, সৎকাজ কর এবং সর্বদা সৎ পথে চলার চেষ্টা কর। মনে রাখিও, ইহাই তোমার মুক্তির পথ হইবে। এবাদত-বন্দেগী এবং সৎ কাজ এত বেশী পরিমাণ কর যে, তুমি পুণ্যাত্মাদের মধ্যে পরিগণিত হও। কারণ-
নিশ্চয়ই নেক লোক বেহেশতী এবং বদ লোক জাহান্নামী। নেককারদের আমল আল্লাহ নষ্ট করেন না। আল্লাহ তাঁহার পবিত্র বাণীতে বলেন: "আল্লাহ এহসানকারীদের পারিশ্রমিক নষ্ট করেন না।"
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যে মোমেন পাপের বোঝা লইয়া আল্লাহর দরবারে যায়, আল্লাহ তাহার সাথে তিনটি কাজের একটি করেন। তাহাকে মেহেরবানী করিয়া ক্ষমা করেন অথবা নবীর শাফায়াতে রেহাই দেন অথবা পাপ পরিমাণ শাস্তি দিয়া জান্নাতী করেন।
তুমি পাপী, তাহাতে কি হইল? তওবার দরজা তো উন্মুক্ত। তওবা কর তওবার দ্বার বন্ধ হওয়ার পূর্বেই। প্রশান্ত মন লইয়া যদি তুমি তাঁহার দরবারে আস তবে চিরোজ্জ্বল হাকীকত তোমার সম্মুখে আসিয়া পড়িবে। সুন্নত আল-জামাআতের মতে, কুফরী ব্যতীত সকল পাপই ক্ষমা করিয়া দেওয়া হইবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
"আল্লাহ তাআলা অংশীবাদিতার পাপ ক্ষমা করেন না। ইহা ব্যতীত যাবতীয় পাপ তিনি ইচ্ছা করিলে ক্ষমা করিয়া দিতে পারেন।" আল্লাহ বলেন, ফিরিয়া আস। আমি তো দরজা খুলিয়া রহিয়াছি। তুমি সাহস করিয়া অগ্রসর হও, আমি তোমার জন্য দণ্ডায়মান আছি। প্রেমের সাথে কাজ আদায় কর, দেখ প্রেমের কি কুদরত। কোন কিছুর পরোয়া করিও না। ইহার সব কিছু রহমত দ্বারা হইয়া থাকে। সকল লোকই যদি নামাযী হইত তবুও প্রেমের রহস্য অবগত হইত না। হেকমতের মনযিল রহমত দ্বারা অতিক্রান্ত করা যায়। সর্বক্ষণ তাঁহার দয়ারই প্রয়োজন হয়।
আল্লাহ তাআলা শিরকের পাপ ক্ষমা না করার কথা ঘোষণা করিয়াছেন। অন্যান্য যাবতীয় পাপ ক্ষমা করা তাঁহার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। সগীরা এবং কবীরা পাপ নহে। সগীরা এবং করীরা গুনাহ ক্ষমা করা তাঁহারই ইচ্ছাধীন। তাঁহার নিকট ক্ষমা পাওয়ার আশাই রাখিবে। নিরাশ কখনও হইবে না। গরীব হও, নিঃসম্বল হও, মুশরিক তো নও। তিনি ভরসা দিয়া নিরাশ করেন নাই। এক বন্ধু বলিয়াছেন, সেই দরবারের রহমতের জন্য যদি তোমার নিকট কোন কিছু না থাকে আর অবস্থা এই হয় যে, তোমার চেয়ে দুর্বল আর কেহ নাই, তবু পরোয়া করিও না। যদি তাঁহার দরবারে বৈরাগ্য এবং পরহেযগারীর কোন মূল্য থাকে তবে দুর্বল বান্দার দুর্বলতাও ক্রয় করা হয়।
No comments:
Post a Comment